মিশরের কুস্তিগীর আশরাফ মাহরুস দাঁত দিয়ে এমন এক কীর্তি গড়েছেন, যা শুনে চোখ কপালে উঠবে! ৪৪ বছর বয়সী এই ‘স্ট্রংম্যান’, যিনি ‘কাবোঙ্গা’ নামেও পরিচিত, দাঁত দিয়ে টেনে তুলেছেন ৭০০ টন বা ৬৩৫,০০০ কেজি ওজনের জাহাজ। শুধু তাই নয়, এরপর তিনি দাঁত দিয়ে একসঙ্গে আরও দুটি জাহাজ টেনে তোলেন, যেগুলোর মোট ওজন ছিল প্রায় ১,১৫০ টন (১০,৪৩,০০০ কেজি)!
এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার লোহিত সাগরের হুরগাদা বন্দরে। মাহরুস বলেন, “আমি এসেছি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙতে। আল্লাহর রহমতে আমি দুইটি জাহাজ টানতে পেরেছি, যাতে আমার বন্ধুরা এবং পুরো বিশ্ব দেখে—আল্লাহ আমাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ হিসেবে আশীর্বাদ করেছেন।”
মিশরের বন্দরনগরী ইসমাইলিয়ার এই কুস্তিগীর আরও জানান, তিনি এই ঘটনাটির ভিডিও ও ছবি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে পাঠাবেন।
বর্তমানে দাঁত দিয়ে জাহাজ টানার রেকর্ডটি রয়েছে ২০১৮ সালে এক ব্যক্তির নামে, যিনি দাঁত দিয়ে ৬১৪ টন (৫,৫৭,০০০ কেজি) ওজনের জাহাজ টেনেছিলেন। তবে মাহরুস সেই রেকর্ড ভাঙতে এবং নিজের নাম আবারও ইতিহাসে তুলতে চান।
এর আগেও তিনি একাধিক বিশ্ব রেকর্ডের মালিক। ২০২৫ সালের মার্চে তিনি দাঁত দিয়ে ২৭৯ টন (২,৫৩,১০৫ কেজি) ওজনের ট্রেন প্রায় ১০ মিটার (৩৩ ফুট) টেনে নিয়ে যান। গিনেস কর্তৃপক্ষ তখন তাকে সবচেয়ে ভারী রেল টানার রেকর্ডধারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তাছাড়া, তিনি পেয়েছিলেন আরও দুটি প্রশংসাপত্র—সবচেয়ে ভারী লোকোমোটিভ টান এবং দ্রুততম ১০০ মিটার সড়কযান টান-এর জন্য।
এর তিন বছর আগে, তিনি দাঁত দিয়ে ১৫,৭৩০ কেজি ওজনের ট্রাক টেনে আরেকটি রেকর্ড গড়েছিলেন। শনিবারের চ্যালেঞ্জের আগে মাহরুস প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা করে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তার খাদ্যতালিকায় ছিল প্রচুর প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার—প্রতিদিন অন্তত এক ডজন ডিম, দুইটি মুরগি এবং ৫ কেজি মাছ।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৯ মিটার) লম্বা ও ১৫৫ কেজি (৩৪১ পাউন্ড) ওজনের এই শক্তিশালী মানুষ বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের অসাধারণ শক্তির প্রমাণ পেয়েছিলেন। মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি টাকার বিনিময়ে ভারী জিনিস টানতেন। একবার বন্ধুর সঙ্গে খেলতে গিয়ে কেবল টান দিয়েই তার বন্ধুর হাত ভেঙে ফেলেছিলেন!
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা ভালোবাসতেন মাহরুস—কুংফু, কিকবক্সিং শিখেছেন এবং পরে কায়রোতে নিজের রেসলিং টিম গঠন করেন।
তার বন্ধুরা একবার দেখেছিলেন, তিনি জিমে এক বিশাল ট্রাকের টায়ার দশবার উল্টে দেন এবং এক আঙুলে গাড়ি ঠেলে দেন! এরপরই বন্ধুরা তাকে বিশ্ব রেকর্ডের চেষ্টায় উৎসাহ দেন।
মাহরুস বলেন, “আমি কোনো সাপ্লিমেন্ট খাই না। তবে প্রতিদিন দুইবার ব্যায়াম করি এবং পর্যাপ্ত ঘুমাই।”
তার পরবর্তী লক্ষ্য আরও অবিশ্বাস্য—তিনি মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির কাছে অনুমতি চাইবেন একটি সাবমেরিন টানার জন্য! ভবিষ্যতে তিনি শুধু চোখের পাতার পেশি দিয়ে বিমান টানার পরিকল্পনাও করেছেন।
তার বিশ্বাস, “আমি যে বস্তুটি টানি, তার সঙ্গে আগে কথা বলি। তাতেই আমাদের মধ্যে একধরনের সংযোগ তৈরি হয়। আমি সেটিকে আমার শরীরের অংশ মনে করি। তখন সেটি আমার হৃদস্পন্দনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে—এটাই আমার সাফল্যের রহস্য।”
