নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে এই তরুণ রাজনীতিবিদ ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার এই জয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, গোটা আমেরিকার রাজনীতিতেই বড় ধরনের আলোড়ন তুলেছে।
কেমন ছিল নির্বাচনের রেস?
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জোহরান মামদানি সহজেই হারিয়েছেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে। কুয়োমোকে হারানোর পর থেকেই মামদানির জয় নিশ্চিত বলে ধরা হচ্ছিল। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও কুয়োমোকে সমর্থন জানালেও, তাতে কোনো লাভ হয়নি।
অবিশ্বাস্য উত্থান: অচেনা থেকে নিউইয়র্কের মালিক
জোহরানের এই সাফল্য সত্যিই রূপকথার মতো। মাত্র এক বছর আগে তিনি রাজনীতিতে পা রাখেন। তখন তাকে চিনতেন খুব কম মানুষ। একজন সাধারণ স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে আজ আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহরের মেয়র—এই যাত্রা মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে! এই অল্প সময়েই তিনি নিউইয়র্কের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরিকে দু'বার পরাজিত করেছেন।
কী কী পরিবর্তন আনবেন জোহরান?
নতুন মেয়র হিসেবে জোহরান বেশ কিছু বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:
ভাড়া নিয়ন্ত্রিত বাসার ভাড়া বাড়ানো আটকানো হবে
সব শিশুর জন্য বিনামূল্যে শিশুসেবা চালু করা
বাসের ভাড়া完全 বিনামূল্যে করা
শহর কর্পোরেশনের নিজস্ব মুদি দোকান চালু করা
যেভাবে শুরু, সেখান থেকে সাফল্য
কুইন্সে হাজারো সমর্থকের সামনে জোহরান তার সংগ্রামের গল্প শোনান: "এখন মনে হয় যেন এটা আগে থেকেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যখন আমি প্রচারণা শুরু করি, তখন একটি টিভি ক্যামেরাও ছিল না আমাদের পক্ষে। চার মাস পরেও আমাদের সমর্থন ছিল মাত্র ১%—আমরা 'অন্য কেউ' প্রার্থীর সমান ছিলাম!"
জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে এই জয়?
জোহরানের এই সাফল্য শুধু নিউইয়র্কেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গোটা আমেরিকার রাজনীতিতে এই জয় নিয়ে আলোচনা হবে। ডেমোক্র্যাট নেতারা দেখবেন কীভাবে জোহরান সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছেন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটকে মূল ইস্যু বানিয়েছেন।
কে ভোট দিয়েছে জোহরানকে?
এনবিসি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী:
প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীর ভোটারই জোহরানকে সমর্থন করেছেন
৪৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যে তিনি কুয়োমোর চেয়ে ৪৩ পয়েন্ট এগিয়ে
তবে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে কুয়োমো ১০ পয়েন্ট এগিয়ে
ইহুদি ভোটারদের ৬০% ভোট দিয়েছেন কুয়োমোকে, জোহরান পেয়েছেন ৩১%
বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
নির্বাচনের শেষ সপ্তাহে জোহরান ও কুয়োমোর মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। কুয়োমো তাকে 'নিউইয়র্কে বিভাজন সৃষ্টিকারী' বলেছেন, আর জোহরান কুয়োমোকে বলেছেন 'ট্রাম্পের কাঠপুতলি'। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
জোহরান বলেন, "আমার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন আক্রমণ হয়েছে। তারা এই নির্বাচনকে আমার ধর্মের উপর গণভোট বানাতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি লড়েছি নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের বিরুদ্ধে।"
ইতিহাসের নতুন অধ্যায়
জোহরান মামদানির এই জয় শুধু নিউইয়র্কের জন্য নয়, গোটা আমেরিকার প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এখন তাকে দেখতে হবে কীভাবে তিনি তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন এবং নিউইয়র্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান।
