মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে পছন্দের কাজ হলো নতুন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে নিয়ে তাদের সঙ্গে লড়াই করা। কিন্তু এবার কি তিনি তাঁরই মতো একজন প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ে গেছেন? নিউইয়র্কের নতুন মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে ট্রাম্পের এই মুখোমুখি লড়াই আসলে মার্কিন রাজনীতির পরবর্তী অধ্যায় নির্ধারণ করছে!
মামদানিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে ট্রাম্প যেন বেশ উৎসাহিতই। তিনি ইতিমধ্যেই মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন, তাঁর নাম নিয়ে মজা করছেন, এবং নিউইয়র্ক সিটিতে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছেন।
কিন্তু মামদানি প্রমাণ করেছেন, ট্রাম্পের মতো করেই তিনি এই খেলাটা খেলতে জানেন।
রিয়েলিটি টিভি স্টার থেকে রাজনীতিতে আসা ট্রাম্পের জন্য কাউকে 'সেলিব্রিটি' হিসেবে নিজের চেয়ে এগিয়ে যেতে দেখা সহজ নয়। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সী মামদানি ঠিক সেটাই করেছেন।
গত মঙ্গলবার তাঁর বিজয়ী ভাষণে মামদানি সরাসরি বলেছিলেন, "ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার কয়েকটি শব্দ আছে—আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন!"
মামদানির এই কথা শেষ হতেই ভক্তরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। পরের দিন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র নিশ্চিত করেন যে, ট্রাম্প সত্যিই এয়ার ফোর্স ওয়ানে বসে মামদানির পুরো ভাষণ দেখছিলেন।
মজার বিষয় হলো, ট্রাম্প এবং মামদানি—দুজনই একে অপরের উপস্থিতি থেকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বামপন্থী মামদানি তাঁর পুরো নির্বাচনী প্রচারেই ট্রাম্পকে একটি 'ভয়ের প্রতীক' হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁকে 'ফ্যাসিস্ট' আখ্যা দিয়েছেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্পকে তিনি সেইসব বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যারা নিউইয়র্কবাসীর পকেট কাটে।
মামদানি নিজেকে একটি প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যে প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন এবং ডেমোক্র্যাট-শাসিত শহরগুলোতে সেনা পাঠিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেই এই প্রতিরোধ।
তাঁর বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, "আমাদের কারও কাছে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।"
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের আক্রমণের মুখে চাপে থাকা ডেমোক্র্যাটদের জন্য মামদানি যেন একটি পাল্টা-আক্রমণের সুযোগ এনে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ডানপন্থীদের কাছেও মামদানি হলেন ট্রাম্পের জন্য একটি আদর্শ শত্রু, যার বিরুদ্ধে তারা সহজেই আক্রমণ চালাতে পারে।
নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির নির্বাচনে রিপাবলিকানরা হেরে যাওয়ার পর, ট্রাম্প ফ্লোরিডার মিয়ামিতে বলেছেন, "আমেরিকানদের এখন বেছে নিতে হবে—হয় কমিউনিজম, নয় বাস্তববাদিতা।"
কিন্তু এই লড়াই শুধু কথার নয়; এর সত্যিকারের ঝুঁকিও আছে।
ট্রাম্প বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছেন যে, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর মতো নিউইয়র্ক সিটিকেও ফেডারেল তদন্তের আওতায় আনবেন।
গত বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, "যদি সে (মামদানি) কমিউনিস্ট হয়, তাহলে শহরে তো আর কোন কাজই হবে না। তাহলে নিউইয়র্কের জন্য পরিকল্পনা করা সেতু, সুড়ঙ্গ ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোরও আর দরকার পড়বে না।"
ট্রাম্পের নিজেদের ঘরেই অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, তিনি হয়তো 'আগুন নিয়ে খেলছেন'। কারণ, মামদানির উত্থান ঘটেছে সেই জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট নিয়ে, যা রিপাবলিকানদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
সাবেক হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন পলিটিকোকে বলেছেন, "ট্রাম্পের জন্য এখন সব জায়গায় সতর্কবার্তা জ্বলছে। সবাই বুঝে নিন, তাদের সামনে এখন একজন আসল যোদ্ধা এসে গেছেন।"
তবে ট্রাম্প এবং মামদানি দুজনেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংঘাত হয়তো কিছুটা শান্ত হতে পারে।
ট্রাম্প একদিকে বলেছেন যে তিনি নিউইয়র্ককে ভালোবাসেন এবং মামদানিকে সফল হতে সাহায্য করতে চান, অন্যদিকে আবার তাঁকে উপদেশও দিয়েছেন, "ওয়াশিংটনের প্রতি একটু সম্মান দেখান।"
আর মামদানিও ভালো করেই জানেন, ট্রাম্প যদি ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেন, তাহলে বিনামূল্যের বাস পরিষেবা, শিশুযত্ন কেন্দ্র বা সিটি-চালিত মুদি দোকানের মতো তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।
গত বুধবার মামদানি বলেছেন, "আমি এখনও আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে, কীভাবে আমরা একসাথে কাজ করে নিউইয়র্কবাসীর সেবা করতে পারি।"
