চীন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সবচেয়ে আধুনিক বিমানবাহী রণতরি ‘ফুজিয়ান’-কে নৌবাহিনীতে যুক্ত করেছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই রণতরির উদ্বোধন হয়, যা দেশটির সামরিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ফুজিয়ান হলো চীনের তৃতীয় বিমানবাহী রণতরি, এবং এটিই প্রথম যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম—একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা যুদ্ধবিমানকে আরও বেশি গতিতে ও দক্ষতার সঙ্গে উড্ডয়ন করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের দাবি, জাহাজের সংখ্যার দিক থেকে চীন ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী গড়ে তুলেছে, আর ফুজিয়ানের সংযোজন সেই সামরিক শক্তিকে আরও এক ধাপ উপরে নিয়ে গেল।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর নেতৃত্বে চীন গত কয়েক বছরে রণতরি ও সাবমেরিনসহ নৌবাহিনী সম্প্রসারণে যে গতি দেখিয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য একটি বড় কৌশলগত সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে।
ফুজিয়ানের সবচেয়ে বড় শক্তি এর সমতল ফ্লাইট ডেক ও ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপাল্ট প্রযুক্তি। এই জাহাজ একসঙ্গে তিন ধরনের যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করাতে পারে। ভারী অস্ত্র ও জ্বালানি বহনে সক্ষম এই বিমানবাহী রণতরি দূরপাল্লার হামলাতেও সহায়ক। ফলে এটি চীনের আগের দুটি রুশ-নির্মিত রণতরি ‘লিয়াওনিং’ ও ‘শানদং’-এর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী বলে ধরা হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ফুজিয়ানকে আখ্যা দিয়েছে চীনের নৌবাহিনীর বিকাশে এক ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ হিসেবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যার বিমানবাহী রণতরিতে এমন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়—এখন সেই তালিকায় যোগ হলো চীনও।
দক্ষিণাঞ্চলীয় হাইনান প্রদেশে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং রণতরির ডেকে ঘুরে দেখেন এবং এর সামুদ্রিক কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ফুজিয়ানে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ক্যাটাপাল্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি সরাসরি সি চিন পিং নিজেই নিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাবিকদের সঙ্গে কথাও বলেন প্রেসিডেন্ট সি। নাবিকরা একযোগে শপথ নেন,
“দলের নির্দেশ মেনে চলব, জয়ের জন্য লড়ব, আর সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা বজায় রাখব!”
বিশ্লেষকদের মতে, ফুজিয়ানের নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি শুধু চীনের সামরিক শক্তিই বাড়াবে না, বরং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্যকেও বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে।
