ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী খুব শিগগিরই মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমানে গাজায় মারাত্মক মানবিক সংকট চলছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই খবর জানিয়েছে।
'শক্তিশালী কয়েকটি দেশ রাজি', দ্রুত হস্তক্ষেপের বার্তা দিলেন ট্রাম্প
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, "এটি খুব শিগগিরই হতে যাচ্ছে। গাজার পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। অত্যন্ত শক্তিশালী কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে, হামাসের সঙ্গে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তারা হস্তক্ষেপ করবে।"
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই সপ্তাহে গাজায় দুই বছরের জন্য একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন ও স্থিতিশীলতা বাহিনীর অনুমোদন নিয়ে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। এই বাহিনী মূলত নাগরিক সুরক্ষা, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং ফিলিস্তিনি পুলিশ প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মন্তব্য করেছেন, গাজায় যেকোনো স্থিতিশীলতা বাহিনীর অবশ্যই পূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈধতা থাকতে হবে, যাতে তারা ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করতে পারে।
২০ হাজার সদস্যের বাহিনীতে থাকছে মিশর, কাতার ও তুরস্ক!
রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি নির্বাচিত সদস্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি অংশীদার দেশের কাছে এই প্রস্তাবের খসড়া পাঠিয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০ হাজার সদস্যের এই বাহিনীকে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে। জানা গেছে, এতে মিসর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও তুরস্ক অংশ নিয়েছে।
হামাস এখনও নিরস্ত্র হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি, যা ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অন্যতম শর্ত। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্থিতিশীলতা বাহিনীর একটি কাজ হবে হামাসের সামরিক কাঠামো ধ্বংস করা এবং তাদের পুনর্গঠন ঠেকানো।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি! কিন্তু ইসরায়েল বারবার ভাঙছে চুক্তি
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার মাধ্যমেই গত ১০ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দিবিনিময় ও সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছিল। তবে ইসরায়েল এরপরও বারবার বোমা হামলা ও মানবিক সাহায্যে বাধা দিয়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে।
এই আলোচনায় তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশটি হামাসকে শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণে উৎসাহিত করেছে। একই সঙ্গে কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে ইস্তাম্বুলে এক বৈঠকে স্থিতিশীলতা বাহিনীর পক্ষে ঐকমত্য গড়ে তুলেছে।
তুরস্ক গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েল যেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি মেনে চলে এবং জরুরি মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেয়।
'গাজায় তুরস্কের উপস্থিতি মানা হবে না', কড়া বার্তা নেতানিয়াহুর
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, গাজায় তুরস্কের উপস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, গাজায় নিরাপত্তা দায়িত্ব ইসরায়েলই রাখবে এবং নিরাপত্তা বেষ্টনীও তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অন্যদিকে, মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য নীতির দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)-এর প্রধান গত মাসে গাজা সফরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনও সেনা সেখানে মোতায়েন করবে না।
