সিএনএন: ২০০০ সাল থেকে শিশু আর কিশোরদের উচ্চ রক্তচাপের হার বিশ্বজুড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে! এর ফলে ভবিষ্যতে আরও বেশি শিশু দুর্বল স্বাস্থ্য আর রোগের ঝুঁকিতে পড়ছে।
“২০০০ সালে ছেলেদের মধ্যে প্রায় ৩.৪% আর মেয়েদের ৩% উচ্চ রক্তচাপ ছিল। ২০২০ সালে এসে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৬.৫% আর ৫.৮%-এ,” বলছেন চীনের ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের পাবলিক হেলথ বিভাগের গবেষক ডঃ পেইজ সং। বুধবার দ্য ল্যানসেট চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার তিনি একজন লেখক।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল আর বেথ ইসরায়েল ডিকনেস মেডিকেল সেন্টারের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডঃ মিংইউ ঝাং বলেন, উচ্চ রক্তচাপে ভোগা শিশুদের বড় হয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি – যা আমেরিকায় মৃত্যুর এক নম্বর কারণ। তিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না।
“ভালো খবর হলো, এটা পরিবর্তন করা যায়,” ইমেলে বলেন সং। “ভালো স্ক্রিনিং, আগে থেকে ধরা আর প্রতিরোধে জোর দিলে – বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর ওজন আর পুষ্টির দিকে – জটিলতা শুরু হওয়ার আগেই আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি।”
শৈশবে স্থূলতা একটা বড় ঝুঁকি। এটা ইনসুলিন প্রতিরোধ, প্রদাহ আর রক্তনালীর কার্যকারিতার সাথে জড়িত, বলেন সং।
অতিরিক্ত সোডিয়াম, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ আর জিনের প্রভাবও উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে পারে। আজকাল শিশুরা আগের চেয়ে কম নড়াচড়া করে, স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটায় – এটাও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, বলেন তিনি।
“আমরা এখন জানতে শুরু করেছি, পরিবেশ দূষণও এর সাথে জড়িত,” যোগ করেন ঝাং।
ঝাং আগের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, PFAS নামের রাসায়নিকের সাথে গর্ভকালীন সংস্পর্শ শিশুদের উচ্চ রক্তচাপের সাথে যুক্ত। এই ১৫,০০০ মানব-সৃষ্ট যৌগ ক্যান্সার, হরমোন সমস্যা আর শিশুদের বিকাশের সমস্যার সাথে জড়িত। PFAS-কে “চিরকালের রাসায়নিক” বলা হয় কারণ এটা পরিবেশে পুরোপুরি ভাঙে না।
পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় বার্তা – উচ্চ রক্তচাপ শুধু বড়দের সমস্যা নয়, বলেন সং।
যদি আপনার সন্তানের ওজন বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে চিন্তা থাকে, তাহলে চাপ, লজ্জা বা কঠোর নিয়ম সেরা উপায় নয়।
বরং সুখী উপায়ে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন, বলেছিলেন ম্যাসাচুসেটসের শিশু পুষ্টিবিদ জিল ক্যাসেল একটা পুরোনো সিএনএন নিবন্ধে।
“খাবারের লক্ষ্য হওয়া উচিত নমনীয়তা আর পুষ্টিকর খাবারে জোর দেওয়া… আর এমন খাবারও অনুমতি দেওয়া যা পুরোপুরি উপভোগ করা যায়,” বলেন ক্যাসেল।
“কিডস থ্রাইভ অ্যাট এভরি সাইজ” বইয়ের লেখক ক্যাসেল বলেন, “পরিবারের সাথে বসে খাওয়াকে প্রাধান্য দিন আর খাবারকে ‘ভালো’ বা ‘খারাপ’ বলে চিহ্নিত করবেন না।”
“প্লেট পরিষ্কার করার ক্লাব বা মিষ্টি দিয়ে পুরস্কার – এগুলো মুহূর্তে কাজ করলেও বাচ্চারা বড় হলে খাবারের সাথে স্বজ্ঞাত, সুস্থ সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে না,” বলেন তিনি।
এই গবেষণা শুধু আমেরিকায় হার ট্র্যাক করেনি। বরং ২১টা দেশের ৯৬টা গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষকরা আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখেছেন – ডাক্তারের অফিসে আর বাড়িতে রক্তচাপের পার্থক্য। কিছু শিশুর বাড়িতে স্বাভাবিক, কিন্তু অফিসে উঁচু। আবার কারো উল্টো।
অফিস আর বাড়ির দুই রিডিং নিয়ে গবেষকরা “মুখোশধারী” উচ্চ রক্তচাপ ধরতে পেরেছেন – যা ডাক্তারের কাছে গেলে ধরা পড়ে না, বলেন ঝাং। তথ্য বলছে, এটাই সবচেয়ে সাধারণ ধরন।
“এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ শুধু অফিসের রিডিংয়ে নির্ভর করলে অনেক শিশুর সত্যিকারের উচ্চ রক্তচাপ অজানা থেকে যায়,” বলেন তিনি।
একটা রিডিং যথেষ্ট নয়। বিশ্বজুড়ে আরও ভালো পর্যবেক্ষণ আর স্কেলযোগ্য সমাধান দরকার, যোগ করেন সং।
