ইহুদিবাদী ইসরায়েলে আবারও হারেদি অতিরক্ষণশীল ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন বড় ধরনের বিক্ষোভ করেছে। আর এই তীব্র বিক্ষোভ ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে থাকা গভীর বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

যেখান থেকে প্রতিবাদের আগুন ছড়াল
পার্সটুডে'র রিপোর্ট অনুযায়ী, দখলকৃত এলাকায় হারেদিদের প্রতিবাদের সূত্রপাত ঘটে মূলত সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক চাপের ফলে। কারণ, এই চাপ হারেদিদের জন্য চালু থাকা বিশেষ সুবিধাগুলো বাতিল করার দিকে এগোচ্ছিল। সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভ শুধু সামরিক অব্যাহতি বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া নয়; বরং এটি ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর ও কাঠামোগত ফাটলের প্রকাশ।

এই ফাটল ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বিদ্যমান ছিল। তবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাপ, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এটি এখন একেবারে বিস্ফোরণ-সীমায় পৌঁছেছে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর সংখ্যায় কম হলেও হারেদিরা বড় ধরনের সুবিধা ভোগ করে আসছিল। সময়ের সাথে সাথে এই সুবিধাগুলো দখলকৃত অঞ্চলের রাজনীতি ও সামাজিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে পরিণত হয়।

হারেদিরা কেন ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ?
হারেদিরা ইসরায়েলের জন্য কয়েকটি দিক থেকে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে:


সামাজিকভাবে হারেদিরা নিজেদের পৃথক এলাকায় বসবাস করে। তাদের নিজস্ব গণমাধ্যম ও শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের পুরুষদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ কম। মূলত নারীরাই মূল উপার্জনকারী হন, ফলে তারা সরকারি ভর্তুকির ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল।

জনসংখ্যার বিস্ফোরণ:

উচ্চ জন্মহারের কারণে হারেদিদের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে তারা ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩%।

ধারণা করা হচ্ছে, এই শতাব্দীর মাঝামাঝিতে তারা ইহুদি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই প্রবণতা ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ দক্ষতায় পিছিয়ে থাকা এই বিশাল জনসংখ্যা অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সামরিক সেবার বিতর্ক:

ইসরায়েলের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি হলো তাদের সেনাবাহিনী। ধর্মনিরপেক্ষ ইসরায়েলিদের দৃষ্টিতে হারেদিদের সামরিক অব্যাহতি সামাজিক সমতার জন্য হুমকি।

বিপরীতে, হারেদিরা মনে করে, সেনাবাহিনীতে যোগদান করা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য ঝুঁকি।

রাজনীতি ও সেনাবাহিনীর চাপ: সরকার কোণঠাসা
রাজনৈতিক শক্তি: রাজনৈতিকভাবে হারেদিরা তাদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয় এবং বর্তমানে তারা ইসরায়েলের জোট ভিত্তিক রাজনীতির প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। তাদের ছাড়া ডানপন্থী সরকার গঠন করা প্রায় অসম্ভব।

সামরিক ঘাটতি: সামরিক দিক থেকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে প্রায় ১২ হাজার সদস্যের ঘাটতি রয়েছে। গাজা ও লেবাননে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই ঘাটতি আরও তীব্র হয়েছে।

জনগণের ক্ষোভ: ইসরায়েলিদের অনেকেই মনে করেন, হারেদিদের ছাড় দেওয়া বৈষম্যমূলক—কারণ তাদের সন্তানরা যুদ্ধে নিহত হলেও হারেদিরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলোও হারেদিদের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার পক্ষে এবং বিষয়টি এখন নেসেটের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কেন্দ্রে রয়েছে।

বর্তমান ইসরায়েলি সরকার দুই দিক থেকে চাপে রয়েছে—সেনাবাহিনী ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ চায় অব্যাহতির সমাপ্তি, আর হারেদিপন্থী দলগুলো ডানপন্থী সরকারের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। ডানপন্থী সরকারগুলো হারেদিদের সমর্থন ছাড়া টিকতে পারবে না, কিন্তু সেনাবাহিনী ও জনমতের চাপ দিনে দিনে বাড়ছে।

সংকট এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তা আর লুকানো সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত বলা যায়, হারেদিরা এখন শুধু একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় নয়; রাজনীতিতেও তাদের ব্যাপক প্রভাব বিদ্যমান।

 

news