গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে জার্মানি তাদের শক্ত রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। রবিবার (৮ ডিসেম্বর) জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস ইসরায়েল সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে মনে করেন না।

এটি মের্ৎসের ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ইসরায়েল সফর। এই সফরটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন বার্লিন তিন মাসের স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে আবার ইসরায়েলের কাছে কিছু নির্দিষ্ট অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করেছে, যা তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ধারাবাহিকতাই নির্দেশ করে।

জার্মানির অস্ত্র সরবরাহের পরিসংখ্যান
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী ছিল জার্মানি, যা ইসরায়েলের মোট অস্ত্র আমদানির প্রায় ৩০ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি মিলে ইসরায়েলের ৯৯ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে।

২০২৩ সালে জার্মান কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের জন্য ৩০৮টি রপ্তানি লাইসেন্স অনুমোদন করেছে, যার মূল্য ৩২.৬৫ কোটি ইউরো। এই পরিমাণ আগের বছরের ৩.২৩ লাখ ইউরোর তুলনায় প্রায় দশগুণ বেশি। ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জার্মানি ইসরায়েলকে ৩৩০ কোটি ইউরো মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গাজার অবরোধ ও হামলায় ব্যবহৃত 'সার ৬ কর্ভেট' শ্রেণির যুদ্ধজাহাজও।

স্থগিতাদেশ উঠে নেয়ার সিদ্ধান্ত
গত আগস্টে মের্ৎস অস্ত্র লাইসেন্স স্থগিত করলে তা নীতি পরিবর্তনের সংকেত বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু ২৪ নভেম্বর বার্লিন এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তাদের দাবি অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির পর গাজার পরিস্থিতি 'স্থিতিশীল' রয়েছে। তবে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলেও জার্মানির স্থগিতাদেশ আর বলবৎ থাকেনি।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরের পর ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯০০-এরও বেশি আহত হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত মানবিক সহায়তার অনুমোদিত ট্রাকের মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশই গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে।

রাজনৈতিক অবস্থান ও অভ্যন্তরীণ দমননীতি
রাজনৈতিকভাবে, জার্মানির অবস্থান ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকেই স্পষ্ট, যখন দেশটির সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শল্ৎস হামলার পর প্রথম জি৭ নেতা হিসেবে ইসরায়েল সফর করেন এবং ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি জোর দেন। জার্মানি জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের সেই যুক্তিও প্রত্যাখ্যান করে যে, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার দাবি করতে পারে না।

জার্মানির অভ্যন্তরে, কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিন-সমর্থক বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করেছে, বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে এবং গাজা-সমর্থিত বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান স্থগিত বা নিষিদ্ধ করেছে। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের বিপরীতে, জার্মানি এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করেছে বলে ঘোষণা করেনি।

 

news