মধ্য এশিয়ার মুসলিমপ্রধান দেশ কাজাখস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে 'আব্রাহাম অ্যাকর্ড'-এ যোগ দিয়েছে। তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাতে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক শান্তি ফোরামে এই ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ত তোকায়েভ।

কাজাখস্তান প্রেসিডেন্টের দপ্তরের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং সামরিক ও রাজনৈতিক সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, তারা চুক্তিতে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্বকেও জোর দিয়েছে।

৭০ শতাংশ মুসলিম জনসংখ্যার দেশ কাজাখস্তান ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০১৬ সালে ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কাজাখস্তান সফর করেন এবং দুই দেশের মধ্যে নানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সম্প্রতি কাজাখ প্রেসিডেন্টের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠকও হয়েছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ নিয়ে সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছে।

কী এই 'আব্রাহাম অ্যাকর্ড'?

ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম— এই তিন ধর্মেরই সম্মানিত পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর নামে এই চুক্তির নামকরণ করা হয়েছে। নাম দিয়ে ধর্মীয় ঐক্য ও শান্তির বার্তাই দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এই চুক্তির সূচনা করেন।

প্রথমদিকে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং বাহরাইন এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মরক্কো এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সুদানও এতে যোগ দেয়।

চুক্তির মূল বিষয়গুলো

১. কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ – ইসরাইল ও স্বাক্ষরকারী দেশগুলো একে অপরের দেশে দূতাবাস খোলে, রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে।
২. অর্থনৈতিক সহযোগিতা – ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বাড়ানো।
३. পরিবহন ও ভ্রমণ – সরাসরি ফ্লাইট চালু, ভিসা নীতিতে ছাড় এবং পর্যটন বাড়ানো।
৪. নিরাপত্তা জোট – ইরানের প্রভাব কমানো, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও সামরিক সহযোগিতা জোরদার করা।

গত শতাব্দীতে চারটি আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর আরব রাষ্ট্রগুলো বলেছিল, ফিলিস্তিন স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না। কিন্তু আব্রাহাম চুক্তি সেই অবস্থান বদলে দেয়, যা ফিলিস্তিনপন্থী দেশগুলোর মধ্যে বিতর্ক তৈরি করে।

কিন্তু চুক্তি ভঙ্গও করেছে ইসরাইল

২০২৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ইরানের সাথে জটিলতার মধ্যে ইসরাইল একসাথে ৬টি আরব অঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কাতার, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেনে হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হন।

সৌদি আরবের অবস্থান এখনও অনড়

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৌদি আরবও এই চুক্তিতে যোগ দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে সৌদি সরকার পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, তারা ২০০২ সালের ঐতিহাসিক 'আরব শান্তি উদ্যোগ'-এর রোডম্যাপ ছাড়া অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তাদের শর্ত একটাই— একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। শুধুমাত্র সেই শর্ত পূরণ হলেই সৌদি আরব ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে।

 

news