আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন এখন শুধু নজরদারির যন্ত্র নয়, এটি সরাসরি আঘাত হানারও হাতিয়ার। সীমান্ত রক্ষা থেকে শুরু করে সুনির্দিষ্ট হামলা—সব জায়গাতেই পাইলটবিহীন আকাশযানের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই বাস্তবতায়, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি ক্রয় প্রক্রিয়ার আওতায় ইসরাইল থেকে আরও উন্নত সংস্করণের ‘হেরন মার্ক টু’ ড্রোন কিনতে যাচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ বছরে ইসরাইলের তৈরি ‘হেরন’ ড্রোনের মুখোমুখি হয়েছে অন্তত ১৪টি দুর্ঘটনা। ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মোট ১২টি ড্রোন হারিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ঘটনার পেছনে মানবিক ত্রুটি আর ইঞ্জিন বিকল হওয়াকে দায়ী করা হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে, রাজস্থানের জয়সলমীরে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ‘হেরন’ ড্রোনকে জরুরি অবতরণ করাতে হয়েছিল।
এর আগে, গত এপ্রিলে জম্মুর সাতোয়ারি বিমানঘাঁটির একটি টাওয়ারে ধাক্কা লেগে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত আরেকটি ‘হেরন’ ড্রোন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ওই ঘটনায় নায়েক পদমর্যাদার এক সেনাসদস্য গুরুতর আহত হন। আরও আগে, ২০১৭ সালে, একটি ‘হেরন’ ড্রোন গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) পার হয়ে তিব্বতের দিকে চলে যায়।
তবে, দুর্ঘটনার হিসাবের আড়ালে ‘হেরন’ ড্রোনের একটা বড় সাফল্যের গল্প লুকিয়ে আছে বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। তাদের মতে, কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে এই ড্রোনের সাফল্যের হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ। বহু ক্ষেত্রে এটি মার্কিন ‘এমকিউ-৯ রিপার’ ড্রোনের কাছাকাছি পারফরম্যান্স দিলেও, দাম তার চেয়ে অনেক কম। মূলত এই দক্ষতা ও খরচ-সাশ্রয়ী দামের কারণেই স্থল ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি এখন নৌবাহিনীর বহরেও হেরন ড্রোন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কার্যক্ষেত্রে অদ্বিতীয় সুবিধা
বিশ্লেষকরা বলছেন, হেরন ড্রোনের সবচেয়ে বড় শক্তি এর টিকে থাকার ক্ষমতা ও দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে থাকতে পারা। এটি একটানা ৪৫ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে এবং বহু ধরনের নজরদারি সরঞ্জাম বহন করতে সক্ষম। সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধ, চরম আবহাওয়ায় টহল দেওয়া বা শত্রুর গতিবিধি নজরদারি—সব কাজেই এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া, ভারত ইতিমধ্যেই হেরন ড্রোন পরিচালনায় যে অভিজ্ঞতা ও অবকাঠামো গড়ে তুলেছে, তাতে নতুন ড্রোন দ্রুত কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী এই ড্রোনগুলোকে অভিযোজিত করতেও সক্ষম।
সংক্ষেপে: দুর্ঘটনা থাকলেও সামগ্রিক কার্যকারিতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং খরচের দিক বিবেচনায় হেরন ড্রোন ভারতের কাছে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ কেনাকাটা বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন ড্রোন পেলে সীমান্ত নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তৎপরতায় ভারতের সামর্থ্য আরও বাড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
