ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া ও চীন। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে ওয়াশিংটনের পদক্ষেপকে 'আগ্রাসী' ও 'ভীতি প্রদর্শনমূলক' আখ্যা দিয়ে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করা হয়।
ভেনেজুয়েলা নিরাপত্তা পরিষদে এই জরুরি বৈঠক আহ্বান করলে, মস্কো ও বেইজিং তা সমর্থন করে। বৈঠকে ভেনেজুয়েলা অভিযোগ করে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের "সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজি" শুরু করেছে।
এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র বিশাল সামরিক শক্তি জড়ো করেছে। 'নৌ-অবরোধের' নামে তারা ইতিমধ্যে ভেনেজুয়েলার তেলবাহী বেশ কয়েকটি ট্যাংকার জব্দ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি: 'নিজেদের রক্ষা করব'
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বৈঠকে দৃঢ় ভাষায় বলেন, "আমাদের অঞ্চল, সীমান্ত ও মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার সব ধরণের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।" মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, ভেনেজুয়েলা তেল বিক্রির অর্থ ব্যবহার করে "মাদক-সন্ত্রাস, মানবপাচার, হত্যা ও অপহরণ" এর মতো অপকর্মে অর্থায়ন করছে।
তবে কারাকাস এই সব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য হলো প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিশ্বের বৃহত্তম এই তেল মজুদ দখল করা।
রাশিয়া-চীনের কড়া জবাব
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া স্পষ্ট বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।" তিনি অবরোধকে সরাসরি 'আগ্রাসন' বলে বর্ণনা করেন এবং জানান, ওয়াশিংটনের আচরণে যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে, তার পুরো দায় তাদেরই নিতে হবে।
চীনের প্রতিনিধি সান লেইও একই সুরে বলেন, "চীন সব ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত ও দাদাগিরির বিরুদ্ধে। সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় আমরা সব দেশের পাশে আছি।"
ভেনেজুয়েলার ক্ষোভ
ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাডা নিরাপত্তা পরিষদে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা এমন এক শক্তির মুখোমুখি, যাদের আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা নেই। তারা ভেনেজুয়েলাবাসীকে দেশ ছাড়তে বলছে এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে দিতে চাইছে।"
মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টজ আবারও দাবি করেন, নিকোলাস মাদুরো মার্কিন বিচারব্যবস্থার দৃষ্টিতে একজন পলাতক আসামি এবং 'কার্টেল দে লস সোলেস' নামক একটি বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রধান। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নামে কোনো সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল গোষ্ঠীর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
