রাশিয়া বড় ধরনের একটি দাবি করেছে। তারা বলছে, শুধু চলতি ২০২৫ সালেই ইউক্রেনের কাছ থেকে প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে তাদের বাহিনী। কিন্তু সমস্যা হলো, এই বিশাল দাবির পক্ষে তারা এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট প্রমাণ বা ছবি দেখাতে পারেনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই বছর রাশিয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলের বিষয়ে বেশ অনড় অবস্থান নিয়েছে। শুক্রবার বছরের শেষ প্রেস কনফারেন্সে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে ঘোষণা করেন, তার বাহিনী পূর্ব দোনেৎস্কের সিভারস্ক এবং উত্তরের খারকিভ অঞ্চলের ভভচানস্ক শহর দখল করে নিয়েছে।

পুতিন আরও দাবি করেন, রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে এখন দোনেৎস্কের লিমান ও কস্ত্যন্তিনিভকা শহর এবং জাপোরিঝিয়ার হুলিয়াইপোল শহরের অর্ধেক অংশ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, যারা ইউক্রেন যুদ্ধের দিনক্ষণ নিয়ে নজর রাখেন, সেই পর্যবেক্ষকরা পুতিনের এই দাবির সঙ্গে একমত নন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার’ (আইএসডব্লিউ) স্পষ্ট বলেছে, স্যাটেলাইট ছবি এবং উন্মুক্ত তথ্য-উপাত্তে পুতিনের দাবির সত্যতা মেলে না। তাদের হিসাব অনুযায়ী, হুলিয়াইপোলের মাত্র ৭.৩%, লিমানের ২.৯%, আর কস্ত্যন্তিনিভকার মাত্র ৫% এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আছে।

এদিকে ক্রেমলিন দাবি করেছে, তারা খারকিভের কুপিয়ানস্ক এবং দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক শহর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। অথচ আইএসডব্লিউর হিসাব বলছে, খারকিভের মাত্র ৭.২% এলাকা তাদের দখলে। বরং উল্টো খবর এসেছে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান কর্ণেল জেনারেল ওলেকসান্দর সাইরস্কির কাছ থেকে। তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী পোকরোভস্কের ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা ফের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।

দাবির মাঝে অসামঞ্জস্য:
গত ১৮ ডিসেম্বর রুশ সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন, রাশিয়া এ বছর ৬,৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। তার এক সপ্তাহ আগে, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ এই পরিমাণ বলেছিলেন ৬,০০০ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু আইএসডব্লিউর হিসাব একেবারেই ভিন্ন। তাদের মতে, দখলকৃত এলাকার পরিমাণ ৪,৯৮৪ বর্গকিলোমিটার এবং জনপদ সংখ্যা ১৯৬টি; রাশিয়ার দাবি করা ৩০০টির বদলে।

এই সব দাবি আসছে এক অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকরা একটি সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে গভীর আলোচনায় বসেছেন। ফ্লোরিডায় তিন দিনের এই বৈঠক সোমবার শেষ হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি চূড়ান্ত চুক্তি করতে চায় এবং ইউক্রেন পূর্ণ সহযোগিতা করছে। তবে মঙ্গলবার প্রকাশিত শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফায় দেখা গেছে, ইউক্রেনের দখলকৃত ভূখণ্ড ফেরত নিয়ে এখনও কোনো ঐকমত্য হয়নি।

 

news