গত দুই বছরে মধ্যপ্রাচ্যে বহু ফ্রন্টে সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েল তার কৌশল গড়ে তুলেছে। গাজা উপত্যকা, লেবানন ও ইয়েমেনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই চালানোর পাশাপাশি তারা পর্দার আড়ালে ইরানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষেও জড়িয়েছে। এবার নতুন উদ্বেগের নাম—ভূমধ্যসাগর। ইসরায়েল মনে করছে, তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি, তাই আঙ্কারাকে মোকাবিলার জন্য তেল আবিব কৌশল গ্রহণ করছে।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে জেরুজালেমে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী এবং সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপ্রধান। বৈঠকের পর নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেন,
“পুরনো সাম্রাজ্য ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখলে তার চরম খেসারত দিতে হবে। ইসরায়েল কখনও শত্রুদের রেয়াত করে না।”
এ মন্তব্যে সরাসরি সতর্ক করা হয় তুরস্ককে।

ইসরায়েল ও তুরস্ক এক সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিল। সামরিক মহড়া, গোয়েন্দা সহযোগিতা—সবই ছিল নিয়মিত। কিন্তু ২০১৪ সালের পর আঙ্কারা পুরনো অটোমান সাম্রাজ্যের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে থাকে। ভূমধ্যসাগর, সিরিয়া ও ইরাকে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো, উত্তর সাইপ্রাসে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন—এসব কৌশল ইসরায়েলের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ইতিহাসও এই উত্তেজনার পটভূমি দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য পরাজিত হলে ১৯২৩ সালের লোজান চুক্তিতে আধুনিক তুরস্কের সীমা নির্ধারিত হয়। তবে আঙ্কারা এই সীমাবদ্ধতাকে পুরোপুরি মেনে নেয়নি। তুরস্কের সামরিক শক্তি, ড্রোন প্রযুক্তি ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার সঙ্গে সিরিয়া ও লেবাননে সক্রিয় উপস্থিতি আঙ্কারাকে আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।

সাতাশ্রেণি বিশ্লেষণ দেখাচ্ছে, আঙ্কারা শুধু ভূমধ্যসাগর বা সাইপ্রাসকে কেন্দ্র করে সীমিত নয়; সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকে তার প্রভাব বিস্তার তেল আবিবের জন্য উদ্বেগের কারণ। ইসরায়েলের কৌশল হলো—ত্রিপাক্ষিক জোট তৈরি, আঙ্কারাকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখে ফেলা, অর্থনীতি ও সামরিক পথে সীমিত করা।

তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। এরদোয়ান গত এক দশকে তুরস্কে জাতীয়তাবাদ ও অটোমান যুগের ইসলামীয় আদর্শ শক্তিশালী করেছেন। ফিলিস্তিন সমর্থনের কারণে তিনি আরব বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। এছাড়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখা এবং আধুনিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার অধিকার আঙ্কারাকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষে পরিণত করেছে।

 

news