আফগানিস্তানে হাজারা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপরাধযজ্ঞ: পশ্চিমাদের দ্বৈত নীতির মুখোশ উন্মোচন

আফগানিস্তানের শিয়া হাজারা জনগোষ্ঠীর ওপর ধারাবাহিক হামলা বন্ধ এবং তাদের প্রতি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশটির বিপুল সংখ্যক মহিলা এবং মেয়ে শিক্ষার্থী কাবুলের পশ্চিমে অবস্থিত দাশত বার্চি এলাকায় জড়ো হয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানিয়েছেন।

আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়ে এবং লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও পালিয়ে যান বলে জানা গেছে। শুক্রবার বারচি দাশত জেলায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার স্থানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে মানবাধিকারের তথাকথিত রক্ষকগণ বিশেষ করে নারীরা এই জঘন্য অপরাধ যজ্ঞের বিরুদ্ধে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। অথচ এসব অপরাধযজ্ঞের শিকার বেশিরভাগই মেয়েরা। অবশ্য আমেরিকা এবং তার মিত্ররা যারা আফগানিস্তানে বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপরাধ করেছে তাদের এই আচরণ স্বাভাবিক বলে বিবেচনা করা হয়।

আফগান রাজনীতি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ সাইয়্যেদ ইসা হোসেইনি বলেছেন, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ আমেরিকা ও তার মিত্রদের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নিরাপরাধ ছাত্রীদের হত্যার ঘটনা মার্কিন অনুচরদের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এ ক্ষেত্রে আমেরিকার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানো আশ্চর্যের কিছু নয়!

বাস্তবতা হলো নারী অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মার্কিনীদের নীরবতা শুধু আফগানিস্তানেই সীমাবদ্ধ নয় তাদের এ অবস্থান বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও দেখা যায় যেমন ইউক্রেন থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোতে নারী ও মেয়েদের পাচার এবং আমেরিকায় স্বয়ং মার্কিন মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও ধর্ষণের বিষয়ে  তাদের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, মহিলাদের যৌন শোষণ থেকে বার্ষিক লাভের পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ইউরো এবং ইউক্রেন সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাচার হওয়া কয়েক লাখ নারী ও মেয়ের মাধ্যমে অর্জিত মুনাফা পশ্চিমাদের পকেটে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক ইস্যুতে বিশেষজ্ঞ সরোশ আমিরি বলেছেন, "বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা পশ্চিমা মুনাফাখোরদের লোভের শিকার। যৌন শোষণের প্রচুর মুনাফা দিয়ে তারা যেখানে শিল্প গড়ে তুলছে সেখানে নারীর অধিকার রক্ষার বিষয়ে  তাদের  যেকোনো দাবি মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

যাইহোক আফগান হাজারা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আফগানি মেয়ে ও নারীদের বিক্ষোভ বহু বছর ধরে চলা নিপীড়িতদের কান্নার আওয়াজ যারা ঐতিহাসিকভাবে আফগানিস্তানে সরকারী পুরুষ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে।  তাই জনগণ বিশেষ করে আফগান নারীরা তালেবান কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যাশা করে যে তারা যেনো এদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনে। যারা আফগান জনগণের মধ্যে জাতিগত ও ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা  চালাচ্ছ তাদের জন্য এ বিক্ষোভ গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news