দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে হারের জের ধরে স্পিনারদের মোকাবিলায় নতুন কৌশল নিয়ে এসেছে ভারতীয় দল। কিন্তু সেই কৌশলটিই এখন চিন্তা বাড়িয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। দলের দুই তরুণ ব্যাটসম্যান সাই সুদর্শন ও ধ্রুব জুরেল স্পিনারদের বিরুদ্ধে নিজেদের উন্নতি করতে গিয়ে এমন একটি বিপজ্জনক অনুশীলন পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন, যাতে তাদের গুরুতর আহত হওয়ার সরাসরি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শেষ নেট সেশনে এই দুই ব্যাটসম্যানকে দলের বেশ কয়েকজন স্পিনারের বল মোকাবিলা করতে দেখা গেছে একেবারে ভিন্ন স্টাইলে। PTI-র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, তারা দুজনেই তাদের প্যাড খুলে এবং কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই এই অনুশীলন করছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট হেরেছে ভারত, তাই শনিবার গুয়াহাটিতে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে ফিরে দাঁড়াতে চায় তারা। প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনারদের, বিশেষ করে সাইমন হারমারের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি।

ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের হেড কোচ গৌতম গম্ভীর ঘরোয়া পিচে স্পিন-বান্ধব টার্নার তৈরির পরিকল্পনা করলেও, সেই পরিকল্পনা পুরোপুরি উল্টো ফল নিয়ে এসেছিল। এবার স্পিন মোকাবিলায় আরও ভালো করার জন্য তিনি ব্যাটসম্যানদের নিয়ে শুরু করেছেন নতুন এই অনুশীলন পদ্ধতি।

সাই সুদর্শনের সামনের প্যাড খুলে ব্যাটিং
মঙ্গলবার ইডেন গার্ডেন্সে ভারত দলের ঐচ্ছিক অনুশীলন সেশনে অংশ নিয়েছিলেন সাই সুদর্শন এবং ধ্রুব জুরেল। সেই সেশনে টার্নিং ডেলিভারি মোকাবিলার জন্য তাদের কেবল একটি করে প্যাড পরতে দেখা গেছে।

বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাই সুদর্শন তার ডান পা থেকে প্যাড খুলে ফেলেছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল লম্বা স্ট্রাইড নেওয়ার সময় সামনের প্যাডের বদলে ব্যাটের ব্যবহার নিশ্চিত করা। এটি তাদের ব্যাক ফুটে খেলার স্বাভাবিক কৌশল থেকে বেরিয়ে আসতেও সাহায্য করতে পারে, কারণ আধুনিক যুগের ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা সাধারণত স্পিনারদের হাত থেকে বল পড়তে পারেন না বলে ধরা হয়।

সামনের প্যাড ছাড়া ব্যাটিং করার মানে হলো, তার জন্য নিজের শিনবোন বা পায়ের অন্যান্য খোলা অংশ নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকা দরকার, যেখানে বল লাগলে ফ্র্যাকচার পর্যন্ত হতে পারে। এই পদ্ধতিকে প্রায়ই একটি পুরনো স্কুলের প্রশিক্ষণ মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা দিয়ে ব্যাট দিয়ে বল ব্লক করার ক্ষমতা বাড়ানো হয়। এটি ব্যাটসম্যানদের স্পিনারদের বিরুদ্ধে জোরালো শট খেলতেও উত্সাহিত করে।

ধ্রুব জুরেলের বিপরীত সুইপ শটের অনুশীলন
সাই সুদর্শন ছাড়াও, আরেকজন ব্যাটসম্যান যাকে একইভাবে অনুশীলন করতে দেখা গেছে তিনি হলেন ধ্রুব জুরেল। তিনিও তার ডান প্যাড খুলে ফেলেছিলেন এবং সেন্টral উইকেটে বিপরীত সুইপ শটের অনুশীলন করছিলেন।

একটি রিভার্স সুইপ সফলভাবে খেলার জন্য ডান পা দিয়ে লম্বা স্ট্রাইড নিতে হয়, এবং তাই এই অনুশীলনটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যা চলন বাড়াতে পারে, কিন্তু একইসাথে ইনজুরির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

এই পুরো অনুশীলন সেশনের সময় হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের নজর ছিল এই দুই ব্যাটসম্যানের ওপর। সুদর্শনকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হচ্ছিল, কারণ যদি শুভমান গিল পরের ম্যাচে খেলতে না পারেন, তাহলে তিনিই সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যাটসম্যান যিনি নম্বর ৪-এ তার জায়গা নিতে পারেন।

দ্বিতীয় টেস্টের আগে কলকাতায় নিতিশ কুমার রেড্ডি
অধিনায়ক শুভমান গিলের আসন্ন টেস্টে অংশগ্রহণ না করাটা প্রায় নিশ্চিত হওয়ায়, অল-রাউন্ডার নিতিশ কুমার রেড্ডিকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং তিনি সোমবার কলকাতায় পৌঁছেছেন। তবে, মঙ্গলবারের ঐচ্ছিক অনুশীলন সেশনে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

ডানহাতি ব্যাটসম্যান হওয়ায়, তিনি নিশ্চিতভাবেই কিছু ভিন্নতা নিয়ে আসেন যা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাই সুদর্শন এবং দেবদূত পাডিক্কালের নেই, বিশেষত যখন দলেই ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছেন।

কলকাতায় আরও একটি চমকপ্রদ ঘটনা হলো, মাত্র ছয়জন খেলোয়াড় ঐচ্ছিক অনুশীলন সেশনে অংশ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন সেই তিন খেলোয়াড় যারা প্রথম একাদশে ছিলেন না। সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে কেবল রবিন্দ্র জাদেজান ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটে ব্যাটিং করেছিলেন।

 

news