কলকাতায় ইডেন গার্ডেন্সে ভারতকে ৩০ রানে হারানোর পর আট উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার সাইমন হারমার। এই দুর্দান্ত জয়ের পরই তিনি সমালোচকদের দিকে ছুড়ে দিলেন এক সূক্ষ্ম খোঁচা। একই সাথে তিনি পুরো দলের অবিশ্বাস্য জয়ের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

সাইমন হারমার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩.৩৮ গড়ে ৬০টি উইকেট নিয়েছেন। তার নামের পাশে আছে সাতটি চার উইকেট এবং একটি পাঁচ উইকেট শিকারের রেকর্ড।

ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর সমালোচকদের এক হাত নেন সাইমন হারমার। প্রোটিয়াসরা মাত্র ১২৪ রানের ছোট লক্ষ্য ডিফেন্ড করেই এই ম্যাচ জেতে এবং হারমার জেতেন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার।

তিনি প্রকাশ করেন যে, ভারতীয় মিডিয়া প্রায় ধরেই নিয়েছিল যে তারা হেরে গেছেন এবং ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে খেলা শেষ বলে ঘোষণা করেছিল! এরপরই হারমার অধিনায়ক বাভুমা এবং পুরো দলের অদম্য বিশ্বাস ও যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

হারমার বলেন, "এটা তো একরকম পূর্বনির্ধারিত ছিল। ভারতীয় মিডিয়া বলেছিল—এই ম্যাচ শেষ! কিন্তু ওই উইকেটে আমাদের শুধু একটি ভালো পার্টনারশিপ দরকার ছিল। আমার মনে হয় তেম্বা (বাভুমা) যেভাবে ব্যাট করেছে, তার টেম্পো, তার একটা খুব দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট গেম প্ল্যান ছিল।"

তিনি কে আরও বলেন, "আমাদের মধ্যে অবশ্যই বিশ্বাস ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, আমরা ১৫০ রান পর্যন্তও যেতে পারি। আর এরপর যখন আমরা মাঠে নামলাম, মার্কো (জ্যানসেন) পরপর দুটি উইকেট নিল এবং শুভমান না খেলায় কার্যত তারা [ভারত] শূন্য রানে তিন উইকেট হারাল। আমরা বুঝলাম, আমাদের সত্যিই একটা সুযোগ আছে। প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। এটা cliché হলেও, এটি ছিল একটি সঠিক টিম এফোর্ট।"

কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন এক ভারতীয় কোচ!
সাইমন হারমার তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ২০১৬ সালে তিনি যখন ভারতে এসেছিলেন, তখন মুম্বাইয়ে কোচ উমেশ পাটওয়ালের অধীনে অনুশীলন করেছিলেন। হারমার খোলাখুলি বলেন, কীভাবে পাটওয়াল একজন স্পিনার হিসেবে তার দক্ষতা উন্নত করতে এবং আন্তর্জাতিক বোলার হিসেবে তাকে বিকশিত করতে সাহায্য করেছিলেন।

তিনি বলেন, "আমার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্তটি ছিল ২০১৬ সালের সেই মুম্বাই সফর। আমি উমেশ পাটওয়ালের সাথে কাজ করার সুযোগ পাই এবং সত্যি বলতে, স্পিন বোলিং সম্পর্কে আমি যা জানতাম, তিনি তা দেখে হাসলেন। সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে হতাশাজনক দুই সপ্তাহ। যে বিষয়গুলো আমি গুরুত্বপূর্ণ ভাবতাম, সেগুলো তিনি বাতিল করে দিলেন। সেখান থেকে যে বিবর্তন হলো, সেটা এক অবিরাম শেখার প্রক্রিয়া।"

তিনি আরও যোগ করেন, "একজন অফ স্পিনার হিসেবে ছোটখাটো সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলোই পার্থক্য গড়ে দেয়। আমি ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে ভালোবাসি এবং এর জন্য উপমহাদেশের চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই। আর এর চূড়া হলো ভারত, কারণ তারা বিশ্বের সেরা স্পিন খেলার খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম।"

"ড্রেসিংরুমে তখন চরম উত্তেজনা!"
সাইমন হারমার প্রোটিয়াদের জয়ে বিশাল ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট শিকার করেন। এই অফ-স্পিনার উভয় ইনিংসেই ৪টি করে উইকেট নেন (৪/৩০ এবং ৪/২১)।

তিনি দাবি করেন, দ্বিতীয় দিনের শেষেও তাদের দলে জয়ের বিশ্বাস ছিল এবং তারা জয়কে বাস্তবে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করেছিল। তাদের দলের অনেক খেলোয়াড় অতীতে ভারতে ব্যর্থতার সম্মুখীন হওয়ায়, তিনি মনে করেন এই জয়টি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

হারমার বলেন, "দ্বিতীয় দিনের শেষে আমাদের মধ্যে কথা হয়েছিল, 'যদি টেবিলে একটি চিপ আর একটা চেয়ার থাকে, তবে তোমাদের সুযোগ আছে'। এটাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল, আর পরের দিন সেটা সত্যি হয়ে গেল! ড্রেসিংরুমে কিছু ছেলে ছিল, যারা ভারতে প্রায়শই বিপরীত ফলাফলের শিকার হয়েছিল। তাই তারা অত্যন্ত উত্তেজিত ছিল। যখন অক্ষর প্যাটেল ছয় মারছিল, তখন স্টেডিয়ামের শব্দ ছিল কান ফাটানো। তাই হ্যাঁ, আপনি আশা করবেন যে পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে যাবে, আর সেটাই হয়েছে।"

 

news