ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট মাঠের সম্পর্ক যখন চরম উত্তেজনার মধ্যে, দুই বোর্ডের নির্দেশে খেলোয়াড়রা যখন সৌজন্যমূলক আচরণ এড়িয়ে চলছেন—ঠিক তখনই এক হৃদয়ছোঁয়া ঘটনায় সবার মন জয় করলেন এক ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটার। হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের মাঝেই প্রমাণ করে দিলেন, চাপের লড়াইয়েও খেলাধুলার সৌন্দর্য হারায় না।
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহু পুরোনো। তবে ২০২৫ সালের আগে কখনোই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা রাজনৈতিক উত্তেজনায় এতটা প্রভাবিত হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের একটি উপত্যকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বহু নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ভারতীয় দলের আচরণে স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যায়।
এশিয়া কাপে শুরু হয় ‘নো হ্যান্ডশেক’ নীতি। ভারত ও পাকিস্তান তিনবার মুখোমুখি হলেও করমর্দন হয়নি। একই চিত্র দেখা গেছে আইসিসি নারী বিশ্বকাপ ও রাইজিং স্টারস মেনস এশিয়া কাপেও। তবে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ যেন সেই গল্পে এক ব্যতিক্রম।
হৃদয় ছুঁয়ে গেল ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটারের মানবিক আচরণ
চলমান ACC মেনস অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে টস ও ম্যাচ-পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতায় পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলানো এড়িয়ে চলে ভারত। কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন এক মুহূর্ত বদলে দেয় পুরো চিত্র।
পাকিস্তানের ইনিংসের সময় ভারতীয় পেসার কিশান কুমার সিং শুধু বল হাতে নন, মানবিক আচরণেও নজর কাড়েন। পাকিস্তানি ব্যাটার হুজাইফা আহসান নিজের জুতার ফিতা ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তখনই এগিয়ে গিয়ে তার জুতার ফিতা বেঁধে দেন কিশান।
এই মুহূর্তের ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। বহু পাকিস্তানি সমর্থক তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটারের প্রশংসায় ভাসান। যদিও ম্যাচের শুরু ও শেষে দলের আনুষ্ঠানিক আচরণের সঙ্গে এই দৃশ্যের ছিল স্পষ্ট বৈপরীত্য।
এর আগেও দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে এমন সৌহার্দ্যের নজির দেখা গেছে। একসময় বিরাট কোহলি, যুজবেন্দ্র চাহাল পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের জুতা বাঁধতে সাহায্য করেছেন। আবার শাদাব খান, হায়দার আলিদেরও দেখা গেছে ভারতীয় ব্যাটারদের পাশে দাঁড়াতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই ইতিবাচক সম্পর্ক অনেকটাই কঠোর হয়ে উঠেছে।
একপেশে ম্যাচে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে উড়িয়ে দিল ভারত
ম্যাচের কথায় ফিরলে, মাঠে ছিল ভারতের একচেটিয়া দাপট। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৯০ রানে হারায় ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
ব্যাট করতে নেমে ভারত ৫০ ওভার পূর্ণ করার আগেই ২৪০ রানে অলআউট হয়। অধিনায়ক আয়ুষ মাহাটরে ঝোড়ো শুরু এনে দেন। এরপর অ্যারন জর্জ, অভিজ্ঞন কুণ্ডু ও কণিশ্ক চৌহান মধ্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। জর্জের ৮৫ রান ও চৌহানের ৪৬ রান ভারতকে বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচায়।
জবাবে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল মাত্র ৪১.২ ওভারে ১৫০ রানে অলআউট হয়ে যায়। একমাত্র লড়াই চালান হুজাইফা আহসান, তার ব্যাট থেকে আসে ৭০ রান। ভারতের পক্ষে দীপেশ দেবেন্দ্রন ও কণিশ্ক চৌহান নেন ৩টি করে উইকেট। কিশান কুমার সিং নেন ২টি উইকেট।
ব্যাটে ব্যর্থ হলেও বল হাতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিলেন বৈভব সূর্যবংশী
আগের ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা তরুণ প্রতিভা বৈভব সূর্যবংশী এদিন ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন। মাত্র ৫ রানে আউট হন তিনি, সহজ ক্যাচ তুলে দেন বোলারের হাতে।
তবে ১৪ বছর বয়সী এই বিস্ময় বালককে ম্যাচের বাইরে রাখা যায়নি। যখন পাকিস্তান অধিনায়ক ফারহান ইউসুফ ও হুজাইফা আহসান জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করছিলেন, তখনই বল হাতে ব্রেকথ্রু এনে দেন সূর্যবংশী। অধিনায়ক ফারহান আউট হতেই পাকিস্তানের জয়ের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়।
