বিরাট কোহলি যেন আবারও স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিলেন ভারতীয় নির্বাচকদের। চলমান বিজয় হাজারে ট্রফি ২০২৫–২৬-এ অন্ধ্রপ্রদেশের বিপক্ষে দিল্লির হয়ে রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি করে ২০২৭ আইসিসি বিশ্বকাপের পরিকল্পনায় নিজের জায়গা আরও শক্ত করলেন তিনি।

৩৭ বছর বয়সী এই ব্যাটিং মহাতারকা বুঝিয়ে দিলেন—ফর্ম, ফিটনেস আর ক্ষুধা—সবই এখনও অটুট। ২০১০ সালের পর প্রথমবার ঘরোয়া ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলতে নেমে কোহলি মাত্র ১০১ বলে ১৩১ রান করেন। তার ইনিংসে ছিল ১২টি চার ও ৩টি ছক্কা।

দল জয়ের মাত্র ২৬ রান দূরে থাকতেই আউট হন কোহলি। তবে তার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিই বেঙ্গালুরুর বিসিসিআই সেন্টার অব এক্সেলেন্সে অন্ধ্রপ্রদেশের বিপক্ষে ২৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে সাহায্য করে দিল্লিকে।

ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিতে এলিট ক্লাবে কোহলি

এই ইনিংসের মাধ্যমে আরেকটি বড় রেকর্ড ভেঙেছেন কোহলি। লিস্ট-এ ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুত ১৬ হাজার রান পূর্ণ করা ব্যাটার এখন তিনিই—ভেঙে দিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড।

কোহলি এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন ৩৩০ ইনিংসে, যেখানে শচীনের লেগেছিল ৩৯১ ইনিংস। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দিল্লির এই তারকার ধারাবাহিকতার আরেকটি প্রমাণ এটি।

এছাড়া লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১৬ হাজার রানের ক্লাবে কোহলি এখন নবম খেলোয়াড়। এই ফরম্যাটে ১০ হাজারের বেশি রান করা ১১৩ জন ব্যাটারের মধ্যে তার গড় ৫৭.৬—মাইকেল বেভানের (৫৭.৮৬) পরই দ্বিতীয়।

এই তালিকায় ৫০-এর বেশি গড় রয়েছে শুধু এবি ডি ভিলিয়ার্স ও এমএস ধোনিরও। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কোহলির ৫৮তম লিস্ট-এ সেঞ্চুরি, যা তাকে ওয়ানডে ইতিহাসের সেরাদের কাতারে আরও শক্তভাবে বসিয়েছে।

রান তাড়ায় কোহলির মাস্টারক্লাস

২৯৯ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ব্যাট হাতে নামেন কোহলি। অর্পিত রানার দুই বলের শূন্য রানে আউটের পর ইনিংস সামাল দেন তিনি, তারপর ধীরে ধীরে আগ্রাসী রূপে ফেরেন।

এই ম্যাচে দুটি বড় জুটি গড়েন কোহলি—

দ্বিতীয় উইকেটে প্রিয়াংশ আরিয়ার সঙ্গে ১১৩ রানের জুটি (আরিয়ার রান ৭৪, বল ৪৪)

তৃতীয় উইকেটে নীতিশ রানার সঙ্গে বিধ্বংসী ১৬০ রানের জুটি (রানার রান ৭৭, বল ৫৫)

এই দুটি জুটিই কার্যত ম্যাচটি দিল্লির দিকে ঘুরিয়ে দেয়।

২০২৭ বিশ্বকাপ: কোহলির খেলা নিশ্চিত? কোচের বড় বার্তা

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর এখন কোহলির পুরো মনোযোগ ওয়ানডে ও ২০২৭ বিশ্বকাপেই। বিজয় হাজারে ট্রফিতে এই ম্যাচকে সরাসরি নির্বাচনী পরীক্ষা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।

কোহলির শৈশবের কোচ রাজকুমার শর্মা এই পারফরম্যান্সের পর আর কোনো সন্দেহ রাখেননি। এএনআইকে তিনি বলেন,
“ও দুর্দান্ত ফর্মে আছে। খুব ভালো ব্যাট করেছে এবং দিল্লিকে জিতিয়েছে। অনেকদিন পর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেও অসাধারণ পারফর্ম করেছে। ভারতীয় দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড় ও, আর বিশ্বকাপের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।”

যদিও টুর্নামেন্ট এখনও দুই বছর দূরে, তবু এই পারফরম্যান্সের পর কোহলিকে উপেক্ষা করা যে নির্বাচকদের জন্য সহজ হবে না, সেটাই স্পষ্ট।

 

news