ইন্টারনেটে প্রায়ই দেখা যায়—“টাকে চুল গজানোর জাদু ফর্মুলা” বা “১০ দিনে ঘন চুল”—এমন শিরোনাম। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর বেশিরভাগই বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে এবার সত্যি এক বৈজ্ঞানিক সাফল্যের খবর এসেছে তাইওয়ান থেকে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, নতুন আবিষ্কৃত এক বিশেষ সিরাম মাত্র ২০ দিনেই চুল গজাতে সক্ষম!
সম্প্রতি Cell Metabolism জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি করেছেন ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা, অধ্যাপক সাং-জান লিনের নেতৃত্বে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকে নির্দিষ্ট কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড প্রয়োগ করলে চুলের গভীরে থাকা স্টেম সেল সক্রিয় হয়, ফলে নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
গবেষণার মূল তথ্য
গবেষণার নাম ছিল — “অ্যাডিপোসাইট লাইপোলাইসিস ফ্যাটি অ্যাসিড বিপাকীয় সংকেতের মাধ্যমে চুলের পুনর্জন্মের জন্য এপিথেলিয়াল স্টেম সেলগুলিকে সক্রিয় করে”।
গবেষক দল দেখতে পান, যখন ত্বকে হালকা আঘাত লাগে, তখন ত্বকের নিচের ফ্যাট কোষ (adipocytes) দুটি নির্দিষ্ট ফ্যাটি অ্যাসিড নিঃসরণ করে — ওলেইক অ্যাসিড এবং পালমিটোলিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিডগুলো PGC1-a নামে এক প্রোটিন সক্রিয় করে, যা কোষ পুনর্জন্ম এবং শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
বিজ্ঞানীরা যখন এই ফ্যাটি অ্যাসিড ইঁদুরের ত্বকে প্রয়োগ করেন, মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই নতুন চুল গজায়। এখন তারা এই প্রক্রিয়াটি মানুষের জন্য নিরাপদ করতে একটি হেয়ার রিজেনারেশন সিরাম তৈরির কাজ শুরু করেছেন।
কেন এই গবেষণা বিশেষ
এটি চুলের স্টেম সেল সক্রিয় করতে ফ্যাট মেটাবলিজমের ভূমিকা প্রকাশ করেছে—যা আগে জানা ছিল না।
প্রচলিত চিকিৎসা যেমন মিনোক্সিডিল বা ফিনাস্টেরাইড রক্তপ্রবাহ বা হরমোনের ওপর কাজ করে, কিন্তু এই পদ্ধতি কাজ করে কোষের অভ্যন্তরীণ মেটাবলিক সংকেতের মাধ্যমে।
এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো স্বাভাবিকভাবেই পাওয়া যায় অলিভ অয়েল, মাছ ও বাদামজাত খাবারে।
সতর্কবার্তা ও সীমাবদ্ধতা
এই গবেষণাটি এখন পর্যন্ত শুধু ইঁদুরের ওপর করা হয়েছে। মানুষের চুল গজানোর প্রক্রিয়া অনেক ধীর ও জটিল।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনো শুরু হয়নি, তাই এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে।
অতিরিক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড প্রয়োগে ত্বকে জ্বালা বা সংক্রমণ হতে পারে।
তাই এখনই এই গবেষণার ফলাফলকে চূড়ান্ত ধরে নেয়া উচিত নয়।
বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি মানবদেহে নিরাপদভাবে প্রয়োগ করা গেলে, টাক চিকিৎসার ইতিহাসে নতুন দিগন্ত খুলবে। তবে আপাতত চুল সুস্থ রাখতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো—সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার।
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            