টর্নেডো আর কালবৈশাখী ঝড়ের পার্থক্য কী

 ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ চমকানোর দৃশ্য। বাংলাদেশে এপ্রিল-মে মাসে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় হয় দেশের নানা জায়গায়। আবার মাঝে মধ্যে শোনা যায় টর্নেডোর কথাও। তবে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠের গরমের সময় কালবৈশাখী বলতে গেলে প্রায় রুটিন হলেও টর্নেডো ঠিক নিয়মিত হয় না। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর টর্নেডো হয়েছিলো মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ১৯৮৯ সালের ২৬শে এপ্রিল। 
ওই টর্নেডোতে মারা গিয়েছিলো এক হাজারের বেশি মানুষ আর আহত হয়েছিলো আরও অন্তত দশ হাজার মানুষ। স্থানীয়দের বর্ণনায় সেদিন বিকেল পাঁচটার দিকে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো সাটুরিয়া। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন এটাই টর্নেডোর বৈশিষ্ট্য যে এটি অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে ভূমিতে পতিত হয়। মূলত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে টর্নেডো, কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি বা বর্জ্রসহ শিলাবৃষ্টির মতো বিষয়গুলো দেখা যায়।
  বঙ্গোপসাগরেই কেন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৌসুমী ঘূর্ণিঝড় হয় প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় ভয়াল সে রাতের কথা কালবৈশাখী ঝড় কেমন হয় বঙ্গোপসাগর থেকে গরম বাতাস বয়ে যায় উত্তর দিকে আর হিমালয় থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আসে দক্ষিণে। এই ঠাণ্ডা ও গরম বাতাসের মিলনস্থলে বজ্রসহ ঘনকালো মেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস নিচে নেমে এসে কালবৈশাখী ঝড়ের সৃষ্টি করে। সাধারণত চৈত্র মাসের শেষে এবং বৈশাখ মাসে সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়।

 ফলে এ অঞ্চলের বাতাস সকাল থেকে দুপুরের মধ্যকার সময়ে রোদের তাপে হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। উচ্চ চাপের উত্তরাঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হওয়ার ফলে মুখোমুখি স্থানে যে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি হয় সেটিই বাংলাদেশে কালবৈশাখী নামে পরিচিত। Reuters ২০২১ সালে টর্নেডোতে লণ্ডভণ্ড হওয়া আমেরিকার কেন্টাকি।

 টর্নেডো কী সাধারণত কোন স্থানে নিম্নচাপ বা লঘুচাপ সৃষ্টি হলে ওই স্থানের উষ্ণ বাতাস উপরের দিকে উঠে যায় এবং তখন ওই শূন্য জায়গা পূরণের জন্য চারদিকের শীতল বাতাস দ্রুত বেগে ধাবিত হয়। কালবৈশাখীর মতো এভাবেই টর্নেডোর উৎপত্তি হয়। তবে কালবৈশাখীর মতো বজ্রঝড়ের সাথে আবহাওয়ার আরও কিছু উপাদান যোগ হয়ে তৈরি হয় এ টর্নেডো। 

এটি মূলত স্থলভাগে তৈরি হওয়া একটি বায়ুচাপ যা প্রচণ্ড বেগে ঘুরতে থাকে এবং খুব স্বল্প সময়ের জন্য সক্রিয় থাকে। টর্নেডোর বায়ুপ্রবাহ হচ্ছে ঘূর্ণন এবং বাতাসের প্রচণ্ড গতিবেগের জন্যই এর ধ্বংসক্ষমতা অনেক বেশি। সহজ ভাবে বলা যায় যে টর্নেডো যে পথ দিয়ে যায় সেখানে সব কিছু গুড়িয়ে দিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কোন সতর্ক সংকেতের কী মানে? বঙ্গোপসাগরেই কেন বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৌসুমী ঘূর্ণিঝড় হয় টর্নেডো কাছে চলে সাধারণ ট্রেন চলার মতো শব্দ শোনা যায়। তবে কখনো কখনো জলপ্রপাতের মতোও শব্দ হয়ে থাকে।

 আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টর্নেডো দেখতে সরু ফানেলের মতো হয়, যার চিকন অংশটি ভূমি স্পর্শ করে। যদিও টর্নেডো বিভিন্ন আকার কিংবা আকৃতির হতে পারে। মাটির কাছে অনেক সময় ছোট ধূলির ঘূর্ণির মতো দেখায়। তবে ঘূর্ণিঝড় যেমন সমুদ্রে উৎপত্তি হয় টর্নেডোর ক্ষেত্রে তা নয়, বরং এটি যে কোন জায়গাতেই হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিবছর টর্নেডোর কথা শোনা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঞ্চলে টর্নেডো বেশি হয়ে থাকে। 

অনেক সময় একটি টর্নেডো থেকে একাধিক টর্নেডো তৈরি হতে পারে যাকে টর্নেডো পরিবার বলা হয়। Getty Images আমেরিকার কেন্টাকির টর্নেডোর গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৩৬৫ কিলোমিটার। কালবৈশাখী ও টর্নেডোর মধ্যে পার্থক্য আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন কালবৈশাখী ঝড় আর টর্নেডোর মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো ঝড়ের গতিবেগ। অর্থাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গতিবেগ ঘণ্টায় একশ কিলোমিটারের বেশিও হতে পারে।

 কিন্তু টর্নেডোর সময় বাতারে গতিবেগ থাকে ২০০-৩০০ কিলোমিটার কিংবা কখনো কখনো এর চেয়ে বেশিও হয়ে থাকে। আবার কালবৈশাখী ঝড় একেবারে হুট করে হয় না এবং ঝড়টি বেশ কিছুটা সময় ধরে থাকে। ঈশান কোণে জমা হওয়া কালোমেঘ এ ঝড়ের আভাস দেয়। অথচ টর্নেডো হতে পারে মূহুর্তের মধ্যে এবং তা হতে পারে খুবই অল্প সময়ের জন্য। কালবৈশাখী ঝড়ের উপাদান টর্নেডো তৈরিতে ভূমিকা রাখে বলে আগে থেকে টর্নেডো সম্পর্কে আঁচ করা যায় না ।
 মি. রশিদ বলেন কালবৈশাখী ঝড় হয় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আর টর্নেডো হয় ছোট এলাকায়। সাধারণত পুকুর বা নদীর কাছে টর্নেডো আঘাত হানে এবং আঘাতের সময় এর বাতাসের গতি কালবৈশাখীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি থাকে। Getty Images ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রে হয় আর টর্নেডো হয় সাধারণত স্থলভাগে টর্নেডোর পূর্বাভাস ও টর্নেডোতে যা করবেন মৌসুমি টর্নেডোর পূর্বাভাস দেয়া কঠিন।
 তবে এখন কালবৈশাখীর মতো সাধারণ বজ্রঝড়ের প্রকৃতি দেখে অনেক সময় টর্নেডোর সতর্কতা দেয়া হয়। টর্নেডো সব তছনছ করে দেয় বলে বিশেষজ্ঞরা টর্নেডোর সময় লোকজনকে বাড়ির বেজমেন্টে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন বেজমেন্টসহ বাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় এখানে যতটা সম্ভব শক্ত বাড়িঘর বা ভবনের ভেতর থাকার পরামর্শ দেয়া হয়।  খবর দ্য ওয়ালের/এনবিএস/২০২২/একে

news