আসছে আরো বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প

দেশে শিল্প ও বাণিজ্য সহায়ক পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম। চলমান সেতু, উড়ালসড়ক ও টানেলসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে আরো নতুন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বৃহৎ সেতু নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে। আগামী ২৫ জুন তারিখে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্হায় এক অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে। আরেকটি বৃহৎ প্রকল্প অর্থাৎ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং ডিসেম্বর ২০২২-এর মধ্যে টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। 

এছাড়া, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত র‍্যাম্পসহ ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এর প্রথম অংশের (বিমানবন্দর-বনানী) প্রায় ৭৮.৯৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সমগ্র প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি প্রায় ৪৩.৬০ শতাংশ। গাজীপুর হতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণকাজের ৬৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, বিমানবন্দর হতে মহাখালী পর্যন্ত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান আছে। 

এছাড়া ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, বরিশাল-ভোলা সড়কে কালাবদর ও তেঁতুলিয়া সেতু নির্মাণ, মিঠামইন সেনানিবাস হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী পর্যন্ত একটি দ্বিতল সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলমান আছে। পাশাপাশি, যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলমান আছে। চলমান সেতু, উড়ালসড়ক ও টানেলসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে আরো নতুন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বৃহৎ সেতু নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও স্বল্প খরচে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ রেলওয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার এ খাতের সমন্বিত ও সুষম উন্নয়নে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) সংশোধিত মহাপরিকল্পনা অনুসারে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার, মোংলা বন্দর, টুঙ্গিপাড়া, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও আঞ্চলিক রেলওয়ে যোগাযোগ স্থাপন এবং উন্নত কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুর মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরসমূহের সঙ্গে নিকটবর্তী শহরতলির যোগাযোগ স্থাপনের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনার আওতায় ছয় ধাপে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

অর্থমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমুদ্র, স্থল ও নৌ-বন্দরসমূহের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে নৌ-রুট ও বন্দরসমূহ সংস্কার ও আধুনিকায়নে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সম্প্রসারণ ও এটিকে বিশ্বমানে উন্নীতকরণের জন্য পতেঙ্গা-হালিশহর উপকূলে বে-টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে, যা সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম ২.৬ দিন হতে কমে ২৪-৩৬ ঘণ্টায় উন্নীত হবে। মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে সেখানে বিদ্যুৎন্দ্রের নির্মাণ যন্ত্রপাতি বহনকারী বৃহৎ জাহাজ ভিড়তে শুরু করেছে। মোংলা বন্দর চ্যানেলকে সচল রাখার এবং ১০.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজসমূহের উপযোগী করার লক্ষ্যে ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পায়রাকে একটি বিশ্বমানের সমুদ্রবন্দর হিসেবে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া দেশের সকল নৌপথ, নৌযান চলাচলের উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজনীয় খনন কার্যক্রম চলমান আছে। 

news