গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নজির স্থাপন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, কঠোর নীতি, দুর্নীতি প্রতিরোধ, ব্যাংকিং শৃঙ্খলা ও বিনিয়োগ আস্থা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দেশের অর্থনীতি এখন স্থিতিশীল এবং আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের কঙ্কাল থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব নেয়, তখন কাজটি অনেকের কাছে অসম্ভব মনে হয়েছিল। বিভিন্ন কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করলে দেখা যায়, পূর্ববর্তী শাসনামলে অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই তথ্য জানিয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রায় ধ্বংস এবং গভীর দুর্নীতি—এগুলো ছিল আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। আমরা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি।”
তিনি জানান, মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি কঠোর করা হয়েছে, অর্থনৈতিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে, দুর্নীতি দমন করা হয়েছে এবং কৃচ্ছ্রসাধন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সম্পদের মূল্য পর্যালোচনা, আর্থিক সংস্কার, চুরি হওয়া সম্পদের পুনরুদ্ধার এবং ব্যাংকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা পেয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক জুলাইয়ে ১২.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। রেমিট্যান্স রেকর্ড পর্যায়ে এসেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে।”
তিনি উল্লেখ করেছেন, বিশ্বে গণঅভ্যুত্থানের পর অন্য দেশগুলোতে প্রায়শই দারিদ্র্য ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে এক বছরেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বহু বছর লেগেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এক বছরেই জিডিপি ইতিবাচক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ড. ইউনূস বলেন, “এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে আর্থিক খাতে। আমরা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ব্যয় কমাতে, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা বজায় রাখতে কাজ চালাচ্ছি।”
তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, দৃঢ় নীতি, আর্থিক ও ব্যাংকিং শৃঙ্খলা, বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ ও পুঁজিবাজারে যথাযথ নীতি বাস্তবায়নের ফলে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে এবং শেয়ার বাজারও ঊর্ধ্বমুখী হবে।


