আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

রাজ্যে ফের অ্যাডিনোভাইরাসে দাপটে মৃত্যু হল ১১ মাসের শিশুর। উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের বাসিন্দা ওই শিশুকে গত রোববার জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিসি রায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটি মারা যায়।

হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে অ্যাডিনো সংক্রমণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। অন্য দিকে বিসি রায় হাসপাতালে বিকল ভেন্টিলেটর অ্যাডিনো উদ্বেগের মধ্যেই বিসি রায় হাসপাতালে হঠাৎই বিকল হয়ে গেল ভেন্টিলেটর। শ্বাসকষ্ট নিয়ে বিসি রায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বিরাটির ৬ মাসের এক শিশু।

মঙ্গলবার থেকে ভেন্টিলেটর ছিল সে। শিশুটির পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ভেন্টিলেটরটি বিকল হয়ে যায়, এরপর নতুন ভেন্টিলেটর আনা অবধি একটি বিশেষ পদ্ধতিতে শিশুকে স্থিতিশীল রাখেন চিকিৎসকরা। কর্তৃপক্ষের দাবি, বিরামহীন ব্যবহারের ফলে ভেন্টিলেটরে বিভ্রাট হচ্ছে।

এদিকে আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েকদিনে এ রাজ্যে অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনে  লাগাতার শিশুমৃত্যুর খবর আসছে। ইতিমধ্যেই ১২ জন শিশু মারা গিয়েছে। যুক্ত হয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাসের আতঙ্ক। সব মিলিয়ে দমবন্ধ করা পরিবেশ। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। আশ্বাস দেন, সমস্তরকম ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য।

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে কম ওজন বা প্রিম্যাচিওর বেবির জন্ম। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রচুর এসএনসিইউ, পিকু, নিকুর ব্যবস্থা রয়েছে। পরিকাঠামোর কোনও অভাব রাখা হয়নি। মুখ্য়মন্ত্রী এদিন বলেন, শীত বিদায়ে গরম পড়ছে। এই বদলের মরসুমে প্রতি বছরই শিশুদের শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। জ্বর, সর্দি, কাশি হয়। ঘাবড়ে না গিয়ে আরও বেশি করে বাড়ির লোকজনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।  মুখ্যসচিব জানান, ৫ হাজার ২১৩টি কেস এসেছিল। তার মধ্যে ১২ জন মারা গিয়েছে। অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন থেকে মারা গিয়েছে তারা।

এদিন তিনি আরও বলেন, আমি বারবার বলি, ভয় পাবেন না। ৫ হাজার বেড আমাদের তৈরি। ৬০০ শিশু চিকিৎসক তৈরি। করোনা যেহেতু প্যানিক হয়ে গিয়েছে। করোনার পর যে কোনও একটা ভাইরাস এলেই…। বাড়ির লোকজনকে যত্ন নিতে হবে। বাচ্চারা মাস্ক পরতে পারে না। ওদের উপর একটু বিশেষ নজর দিয়ে বাইরে যাতে না বেরোয়। ঘরে রাখাটাই ভাল।

এডিনো ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে চিকিৎসক জয়দেব রায় জানাচ্ছেন, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও একটি ভাইরাস। তবে সমস্ত সর্দিকাশি জ্বরই যে অ্যাডেনো ভাইরাস, তা নয়। অ্যাডেনো ভাইরাসের প্রায় ১০০টি স্ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনও স্ট্রেনে মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে ৩ এবং ৭ নম্বর স্ট্রেনটি বেশি দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যেও ৭ নম্বর স্ট্রেনটি বেশি মারাত্মক বলে মনে করছেন জয়দেববাবু।

অ্যাডেনো ভাইরাসে  শিশুদের আক্রান্তের গ্রাফ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। ইতিমধ্যেই এমন বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হয়েছে যাদের দেহে মিলেছে অ্যাডেনো ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ। পরিস্থিতি একদিকে যেমন আতঙ্ক বাড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে, তেমনই উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যমহলও। এই পরিস্থিতিতে অ্যাডেনো ভাইরাসারের উপসর্গ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রফেসার তথা প্রিন্সিপাল ডাঃ জয়দেব রায়।

চিকিৎসক জয়দেব রায় জানাচ্ছেন, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও একটি ভাইরাস। তবে সমস্ত সর্দিকাশি জ্বরই যে অ্যাডেনো ভাইরাস, তা নয়। অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রায় ১০০টি স্ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে যে কোনও স্ট্রেনে মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে ৩ এবং ৭ নম্বর স্ট্রেনটি বেশি দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যেও ৭ নম্বর স্ট্রেনটি বেশি মারাত্মক বলে মনে করছেন জয়দেববাবু।

তিনি আরও জানাচ্ছেন, অ্যাডেনো ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মূলত ৩ ধরণের বিষয় দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ সাধারণ প্যারাসিটামল, কাফ সিরাপ ইত্যাদি ওষুধে সেরে উঠছে। কেউ আবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তবে তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার লাগছে না। তবে কাউকে কাউকে ইনটেনসিভ কেয়ারে পাঠাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রি ম্যাচিওর বেবি, লো বার্থ ওয়েট বা ঘন ঘন রেসপিরেটারি ট্র্যাক ইনফেকশনে যারা আক্রান্ত হয় তাদেরকেই বেশিরভাগ সময় ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তিনি।
 
অ্যাডেনো ভাইরাসের উপসর্গ ডাঃ রায় জানাচ্ছেন, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এক্ষেত্রেও জ্বর, সর্দি, কাশি, হাঁচি দেখা যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে জ্বর খুব বেশি থাকছে। তাছাড়া কারও কারও ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিস ও ডায়রিয়াও দেখা যাচ্ছে।

এনবিএস/ওডে/সি

news