গ্রিসে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের একজন চট্টগ্রামের ইদ্রিস

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গ্রীসে ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনায় মো. ইদ্রিস (৪০) নামের এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। সে চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলার ৮ নম্বর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মৃত সাহেব মিঞার ছেলে।

শুক্রবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে জামিল ও বাচ্চু নামের ২ ব্যবসায়ী বন্ধু তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে, গত মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে গ্রিসের লারিসা শহরের কাছে ট্রেন দূর্ঘটনার ঘটনায় সে প্রাণ হারায়।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বাল্যকালে পিতৃহারা ইদ্রিস ভাগ্য বদলের আশায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান। পরে সেখান থেকে গত ৯ বছর পূর্বে গ্রীসে চলে যান। ইউরোপের দেশ গ্রীসে কাগজপত্র হবার পর থেকে পরিবারের মা, ভাই বোনদের নিয়ে ভালই চলছিলো দিনগুলো। পরে গত আনুমানিক ৩ বছর পূর্বে দেশে ছুটিতে এসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করে যুগল জীবন শুরু করেন। গ্রিসে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করা ইদ্রিস গত বছরখানেক আগে সর্বশেষ দেশে ছুটি কাটিয়ে পুনরায় প্রবাসে চলে যান।

নিহতের বাল্যবন্ধু ওমান প্রবাসী জিয়া হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, সম্পর্কে ভাগিনা (চাচাতো বোনের ছেলে) হলেও একই বয়সী হওয়াতে আমরা ছিলাম ভাই ও বন্ধুর মতো। যেদিন তাকে বহনকারী ট্রেন দূর্ঘটনার স্বীকার হয় সেদিন ট্রেন ছাড়ার ৩০ মিনিট আগেও আমার সঙ্গে ফোনে কথা হযেছিলো ইদ্রিসের। ইদ্রিস বলেছিলো, “কার্ড নবায়ন করতে সে ওই শহরে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই আজ ট্রেনে ভ্রমণ করতে ইচ্ছে করছে না।” অনেক কথা হযেছিলো, ভিডিও কলে ট্রেনটা এবং কোথায় সে বসেছে সে সিট সব দেখিযেছিলো সে রাতে। তার সিট ছিলো ২ নম্বর বগিতে। পরে রাত বেশি হয়ে যাওয়াতে ওই শহরে পৌঁছে সকালে ফোন দিবে বলে ভাই (ইদ্রিস) বিদায় নেয়। বুঝতে পারিনি এ বিদায় শেষ বিদায় হবে। আমি কিছুতেই মনকে শান্তনা দিতে পারছি না।

এ রিপোর্ট লিখার সময় বাংলাদেশ সময় শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে গ্রীসের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিহতের বন্ধু জামিল ও বাচ্চু অবস্থান করছে। তারা জানান,  প্রয়োজনীয প্রক্রিয়া শেষে হলে আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ইদ্রিসের মরদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে নিহতের আপন ছোট ভাই অনেকটা বাকরুদ্ধ ইলিয়াস জানায়, ‘ভাইকে এভাবে হারিয়ে ফেলবো কখনও কল্পনাও করিনি। আমি আর কি বলবো’ বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য বেলাল উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে গতকাল রাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে ইদ্রিস মারা গেছে। দূর্ঘটনায ট্রেনের বগিতে আগুন ধরে যাওয়াতে তার শরীরের প্রায় ৮০ ভাগ পুড়ে যায়। তাই ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ সনাক্ত করতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, গ্রিসে প্রায় সাড়ে ৩শ’ যাত্রী বহন করা ওই ট্রেনটির একই পথে আসা অপর একটি কার্গো ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে অনেক বগি ছিটকে পড়ে যায়। এসময় কয়েকটি বগিতে আগুন ধরে যায়৷ এর ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে৷ গ্রিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ ট্রেন দূর্ঘটনা।

এনবিএস/ওডে/সি

news