চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একঘরে করে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় এক ঘরে করে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহজ হয়ে পড়েছে। এক বছরে আগে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রুশ প্রেডিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় মিত্র দেশগুলোর সম্পর্ককে দৃঢ় করার দরজা খুলে দিয়েছে। বিষয়টি হয়ত চীনের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত হতে পারে।

গত কয়েক মাসে জাপান তার সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দূরপাল্লার অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছে। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, তার নিজের নিরাপত্তার জন্য তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতা জরুরী। ফিলিপাইন নতুন মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন করার সুযোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে দক্ষিণ চীন সাগরে টহল দানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

এগুলো বড় ধরণের উদ্যোগ। তবে নিজ হালটে চীনকে ক্রমবর্ধমান ্এক ঘরে করার চেষ্টার ক্ষেত্রে এ গুলো কয়েকটি ঘটনা মাত্র। চীন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেছে। সেই সাথে স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের ওপর সামরিক চাপও বাড়াচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ যদি না হতো তাহলে এ ধরণের সুযোগ ওয়াশিংটন হয়ত পেত না। ইউক্রেন যুদ্ধ ও মস্কোর প্রতি বেইজিংয়ের সমর্থন এ পরিকল্পনা কার্যকর করতে অনেকটা সহায়ক হয়েছে।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে দি¦তীয় বিশ্বযু্েদ্ধাত্তর জাপানের  সংবিধানের সীমিত আকারের “আত্মরক্ষা বাহিনী” এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দূরপাল্লার টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র কিনছে। যা দিয়ে চীনের গভীর অভ্যন্তরে আঘাত হানা সম্ভব।

গত গ্রীষ্মে সিঙ্গাপুরে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, “আমার মনে হচ্ছে আজ ইউক্রেনে যা ঘটছে আগামীকাল পূর্ব এশিয়ায় তা ঘটতে পারে। গত ডিসেম্বরে কিশিদা জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করেন। এর সাথে দূর পাল্লার অস্ত্র সংগ্রহ করছেন যা তার ভূখন্ডের বাইরে আঘাত হানতে পারবে।

সিঙ্গাপুরের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডিজ এর  এস রাজারাতমান বলেন, “জাপানের জনগণ ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে অবশ্যই গভীরভাবে দেখছে এবং জাতি হিসেবে নিজেদেরকে অধিকতর দুর্বল মনে করছে।” জাপানীরা জাতি হিসেবে চীনের তুলনায় নিজেদেরকে এখন দুর্বল বলে মনে করছে।

অনেক বছর ধরে চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মিকে বড় ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হয়েছে। গত  রোববার বেইজিং ২০২৩ সালের সামরিক বাজেট ঘোষনা করে। এতে ব্যয় ৭.২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এনিয়ে চীন পরপর তিন বছর ধরে সামরিক ব্যয় বাড়ালো।

চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি বহুবছর ধরে তাইওয়ানের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। তারা তাইওয়ানকে চীনের নিজস্¦ ভুখন্ড বলে মনে করে। যদিও কখনো তারা দ্বীপটির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এবং চীনা নেতা শি দ্বীপটিকে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে একীভূত করতে শক্তি প্রয়োগ না করার কথা বার বার নাকচ করে দিয়েছেন। রাশিয়া ইউক্রেনে এখন যা করছে চীনও এক সময় তাইওয়ানে তেমনটি করতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

টোকিওর নেতারা বলছেন যে, জাপানের নিরাপত্তার জন্য তাইওয়ান প্রণালী বরাবর শান্তি জরুরী। এটি নতুন কিছু নয়। কিন্তু জাপানের জন্য বিষয়টি এখন আরো বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে।

কয়েক বছর যাবত জাপান তার প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার প্রতি নজর দিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ কিশিদার নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা জাপানের মতো করে তাইওয়ান পরিস্থিতিকে দেখছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক জিন সিএনএনকে বলেন, তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য জরুরী।

তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে দক্ষিন কোরিয়া পরমানু শক্তিধর কিম জং উনের মোকাবিলায় দুর্বল অবস্থায় আছে। এ প্রেক্ষিতে অনেকে দক্ষিন কোরিয়াকে আত্মরক্ষায় আরো স্বনির্ভর হওয়া, এমনকি পারমানবিক অস্ত্র অর্জনেরও আহ্বান জানা্েচ্ছ।

এদিকে সিউল ও টোকিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ নৌ মহড়া চালানোসহ প্রতিরক্ষার বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ট সহযোগিতা করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নিজস্ব তৈরি অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্যাংক, হাউইটজার ও জঙ্গী বিমান।

এনবিএস/ওডে/সি

news