ইরান-সৌদির মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা: পশ্চিম এশিয়াসহ মুসলিম বিশ্বে নয়া দিগন্তের সূচনা

দীর্ঘ ৭ বছরের অচলাবস্থার পর চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে সম্মত হয়েছে।

ইরান ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিরা তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে চীনের দেয়া একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। এ সময় ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি এবং সৌদি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুসাইদ আল-আইবান উপস্থিত ছিলেন। দুই দেশই সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে রাষ্ট্রদূত বিনিময় এবং দূতাবাস পুনরায় চালু করার পাশাপাশি সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সম্মত হয়।

২০১৬ সালে রিয়াদ ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য রিয়াদের পক্ষ থেকে অজুহাত ছিল তেহরান এবং মাশহাদে অবস্থিত দেশটির দূতাবাস এবং কনস্যুলেটে হামলা যদিও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান একদল দুষ্কৃতিকারীদের মাধ্যমে চালানো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছিল। ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের এই পদক্ষেপের প্রধান কারণ ছিল সে সময় রিয়াদের পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিভঙ্গি। ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের পরাষ্ট্রনীতি আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। ফলে এ সময় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে রিয়াদ সরকার তার এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছে । এমনকি সৌদি আরবও ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সর্বোচ্চ চাপের নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।

২০২১ সাল থেকেই রিয়াদ এবং তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং সাবেক ইরাকি সরকার দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে আসছিল। বাগদাদে ইরান ও সৌদি আরবের প্রতিনিধিদের মধ্যে ৫ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন এবং অবশেষে চীনের মধ্যস্থতায় বেইজিংয়ের পক্ষগুলো সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌছাতে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করে।

রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বহাল করা আমেরিকা ও ইসরাইলের ব্যর্থতা। একদিকে, এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি বিশ্ব ব্যবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মধ্যস্থতায় উপলব্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে এই চুক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ব্যবধান ও বিভেদ সৃষ্টির ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের প্রচেষ্টার ব্যর্থতার দিকটি তুলে ধরছে। একইসঙ্গে এই চুক্তিকে এ অঞ্চলে বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে আমেরিকা ও ইসরাইলের ইরানভীতি সৃষ্টি করার অপকৌশলের পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্বহালে চুক্তি পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে গঠনমূলক প্রভাব ফেলবে। ফলে এই চুক্তির ঘোষণা এ অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ তাকে স্বাগত জানিয়েছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান একটি টুইটে লিখেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রত্যাবর্তন দুই দেশ, অঞ্চল এবং ইসলামিক বিশ্বের জন্য দুর্দান্ত সক্ষমতা বয়ে আনবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক হোসেইন বেহেশতিপুরও বিশ্বাস করেন যে রিয়াদ এবং তেহরান উভয়ই মহান আঞ্চলিক শক্তি যারা তাদের জাতীয় স্বার্থ একে অপরের সাথে সহযোগিতা করতে পারে। এছাড়া এই চুক্তি দুইদেশের মধ্যে সম্পর্কের বিদ্যমান উত্তেজনা কমানোার পাশাপাশি এই অঞ্চলে বিশেষ করে ইয়েমেনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন ইরানের ১৩ তম সরকারের প্রতিবেশী বিষয়ে তার পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের অংশ। কারণ  প্রেসিডেন্ট রায়িসির সরকার শুরু থেকেই আঞ্চলিক এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর উপর জোর দিয়ে আসছেন। এই বিষয়ে হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান লিখেছেন, ১৩ তম সরকারের পররাষ্ট্র নীতি দৃঢ়ভাবে সঠিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং আরও আঞ্চলিক পদক্ষেপের প্রস্তুতির পিছনে কূটনৈতিক কৌশলগুলো সক্রিয় রয়েছে।
খবর পার্সটুডে/ এনবিএস/২০২৩/একে 

news