গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় কী হবে পুতিনের

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনের এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে যুক্তিযুক্ত বলে সমর্থন করেছেন।সিএনএন ।

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত শুক্রবার। রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া আলেক্সিয়েভনা লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। মারিয়া হচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্টের অফিসের শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন বিচারক এই আদেশ দেন।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা এ ব্যাপারে বলেন, ‘রাশিয়া রোম সংবিধির আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কোনো সদস্য নয় এবং এর নির্দেশ মানার জন্য বাধ্য নয়। রাশিয়া এ আদালতকে কোনো সহযোগিতা করে না। আন্তর্জাতিক আদালত থেকে আসা খবর সিএনএন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইনগতভাবে আমাদের কাছে ভিত্তিহীন।’  

আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জোরপূর্বক ইউক্রনের শিশুদের নিয়ে যাওয়া এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো থেকে জোরপূর্বক শিশুদের রাশিয়ার নিয়ে যাওয়ার মতো যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে।’এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনও পাল্টা জবাব দিচ্ছে। শুরু থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে আসছে ইউক্রেন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। যদিও রাশিয়া সেই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

আইসিসির হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলেও কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারে না। আইসিসি যা করতে পারে তা হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন দেশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা এবং গ্রেপ্তারের পরে তাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে তার কার্যালয়ে বিচারের জন্য হাজির করা।

আইসিসি এর আগে সুদানের প্রেসিডেন্ট বশিরকে দোষী সাব্যস্ত করে। কিন্তু তিনি কখনো আদালতে হাজির হননি। পুতিন কখনো আদালতের কাছে নিজেকে সমর্পন করবেন না এবং রাশিয়াও তাকে হস্তান্তর করবে না। তবে  গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জি-২০, জি-৮ ও অন্যান্য  সংস্থাগুলোর সঙ্গে পুতিনের সংযোগ সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে। এ পরোয়ানা আইসিসির কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা অভাব  প্রকাশ পেতে পারে। পুতিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়  সদস্য দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আইসিসির পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি  একটি সুস্পষ্ট বার্তা এবং অন্যদের প্রতি জেগে উঠার আহ্বান।

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ. গণহত্যা, ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে ২০০২ সালে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। কোন সদস্য রাষ্ট্রগুলো এসব অপরাধের বিচার না করলে বা করতে অসমর্থ হলে আইসিসি তার বিচার করবে। আইসিসির সদস্য সংখ্যা ১২৩। ২০২৩ সালে আইসিসির বাজেট হলো ২৭ কোটি ডলার।

আইসিসি ১৭টি অপরাধের ঘটনা তদন্ত করছে। ইউক্রেন, আফ্রিকার দেশ যেমন, উগান্ডা, গণতন্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও কেনিয়া থেকে লাটিন আমেরিকার ভেনিজুয়েলা এবং এশিয়ার মিয়ানমার ও ফিলিাপাইনে এসব তদন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে। আইসিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়, এ আদালতে এ পর্যন্তু ৩১টি মামলা হয়েছে। কয়েকটি মামলায় অপরাধীর সংখ্যা একাধিক রয়েছে। আইসিসি বিচারকরা ৩৮টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

আইসিসির আটক কেন্দ্রে ২১ জনকে আটক রাখা হয়েছে। তারা আদালতে হাজির হয় এর আগে। ১৪ জন পলাতক রয়েছে। মৃত্যুর কারণে ৫ জনের পরোয়ানা তুলে নেয়া হয়েছে। বিচারকরা ১০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং ৪ জনকে খালাস দিয়েছেন।

এনবিএস/ওডে/সি

news