ভারতে আসাম সরকার ৭১ হাজার ব্যক্তি ‘ডি-ভোটার’ ও ৩৭ হাজার বিদেশি
ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপিশাসিত আসামে ‘হিন্দু বাঙালি’রা বিপদের মধ্যে আছেন, তারা লাঞ্ছিত-বঞ্চিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
এ প্রসঙ্গে তিনি রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চেয়েছেন। কমলাক্ষ বলেন, ‘হিন্দু বাঙালিরা ব্যাপকভাবে নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিজেপি সরকার হিন্দু বাঙালিদের সুরক্ষা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আসামের বুকে হিন্দু বাঙালিরা কেন বিপদে, হিন্দু বাঙালিদের কেন ‘ডি ভোটার’ (সন্দেহজনক ভোটার) নোটিশ দেয়া হচ্ছে, হিন্দু বাঙালিরা কেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত এবং সামাজিকভাবে নিষ্পেষিত, সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর চাই। রাজ্যবাসী বিশেষ করে হিন্দু বাঙালিরা এই উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন।’
বিধায়ক কমলাক্ষ বলেন, ‘বিজেপি সরকার সাত বছরে ৭১ হাজার ব্যক্তির নামে ‘ডি-ভোটার’ নোটিশ ইস্যু করেছে। ৩৭ হাজার ব্যক্তিকে বিদেশি বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং মাত্র এক জনকে বহিষ্কার করেছে সরকার। তিনি বলেন, সম্প্রতি জি ২০ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন। গত সাত বছরে ঘোষিত বিদেশিদের কীভাবে বহিষ্কার করা যায় তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’
মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপির সিনিয়র নেতা হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে টার্গেট করে কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ আরও বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই সনাতন সভ্যতা-সংস্কৃতির বিষয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেন। কিন্তু এবার বোঝা গেল, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সনাতন সভ্যতা-সংস্কৃতির অর্থ কী? এটার অর্থ হচ্ছে, ৭১ হাজার ব্যক্তিকে ‘ডি ভোটার’ নোটিশ পাঠানো! মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সনাতন সভ্যতা-সংস্কৃতির অর্থ হল, ১৯ লাখ ব্যক্তির ‘এনআরসি’তে নাম না থাকা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সনাতন সভ্যতা-সংস্কৃতির অর্থ হচ্ছে ২৮ লাখ ব্যক্তির আধার কার্ড না হওয়া, সনাতন ধর্মের অর্থ হচ্ছে দুর্গাপুজোয় কোনও ধরণের চাঁদা না দেওয়া!’
কংগ্রেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, যা ‘এনআরসি’ (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) করতে পারেনি, ‘আসাম চুক্তি’ করতে পারেনি। সেটা ‘ডিলিমিটেশন’ (নির্বাচনী এলাকা পুনর্বিন্যাস) করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এবার তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সহমত হয়েছেন। তিনি এটা বিশ্বাস করছেন যে, যা এনআরসি করতে পারেনি, আসাম চুক্তি করতে পারেনি সেটা ‘ডিলিমিটেশন’ করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ, আসামে বর্তমানে কোনও বিদেশি নেই। ফলে, ‘ডি ভোটার’ নোটিশ পাঠানো ৭১ হাজার হিন্দু বাঙালিকে রেহাই দেওয়া হোক।’
প্রসঙ্গত, ‘ডি-ভোটার’, অর্থাৎ ডাউটফুল ভোটার বা সন্দেহজনক নির্বাচক। এর মানে, যাদের নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণ নেই, তেমন ভোটার। ১৯৯৭ সালে আসামে প্রথম এই ‘ডি-ভোটার’ শনাক্তকরণ শুরু হয়। এর মাধ্যমে আসাম সরকারকে ‘বৈধ নাগরিকদের’ চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয় জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই সময় ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে ডি-ভোটার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৩১০০ জন ডি-ভোটারকে ভিনদেশি বলে ঘোষণা করা হয়। এরপর অনেককে ডিটেনশন ক্যাম্পেও তুলে আনা হয়। ২০১১ সালে খারিজ করা হয় ডি-ভোটারদের ভোটাধিকার। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা
এনবিএস/ওডে/সি


