রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ১,১৫৭তম দিনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে রাশিয়ার একজন উচ্চপদস্থ জেনারেলের হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ইউক্রেনে রাশিয়ার নতুন হামলা পর্যন্ত রয়েছে। মস্কোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর বালাশিখায় একটি গাড়ি বোমা হামলায় রাশিয়ার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মস্কালিক নিহত হয়েছেন। ৫৯ বছর বয়সী এই জেনারেল রাশিয়ান জেনারেল স্টাফের সদস্য ছিলেন। ঘটনাটিকে রাশিয়ার তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ও ক্রেমলিন "সন্ত্রাসী হামলা" বলে দাবি করেছে। ভোল্ক্সওয়াগেন গল্ফ গাড়িতে লাগানো একটি আইইডি বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন। ক্রেমলিন দ্রুতই এই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে, যদিও কিয়েভ এই অভিযোগের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। রাশিয়ান যুদ্ধব্লগারদের মতে, মস্কালিক ছিলেন একজন উদীয়মান নক্ষত্র, যিনি ইউক্রেন সংকট সমাধানের জন্য পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

এদিকে, শুক্রবার রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের পাভলোহরাদ শহরে একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে ড্রোন হামলা চালিয়ে তিনজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একটি শিশু ও ৭৬ বছর বয়সী এক নারীও রয়েছেন। ইউক্রেনের ডনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি লিসাক টেলিগ্রামে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া পাঁচটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলে ১০৩টি শাহেদ ও ডিকয় ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। সুমি ও খারকিভ অঞ্চলে বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার কিয়েভে রাশিয়ার হামলায় নিহতদের স্মরণে সেখানে গিয়েছিলেন, যেখানে অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া কিয়েভে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার জুড়ে থাকা ফ্রন্টলাইনে ১৫০টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, কিয়েভে ব্যবহৃত মিসাইলে মার্কিন কোম্পানির তৈরি যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে।

ক্রিমিয়া প্রসঙ্গে জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়া নিয়ে ইউক্রেনের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে চাপ দিচ্ছে যেন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ক্রিমিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, "ইউক্রেন আইনগতভাবে কোনো অস্থায়ী দখলকৃত অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেবে না। এটি শুধু ইউক্রেনের সংবিধানের দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকেও ন্যায়সংগত।" তিনি আরও যোগ করেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আমি একমত যে, ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য ইউক্রেনের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই। কিন্তু আমাদের কাছে এবং বিশ্বের কাছে স্যানশনের বিকল্প রয়েছে।"

জেলেনস্কির এই মন্তব্যের পরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "ক্রিমিয়া রাশিয়ার সাথেই থাকবে।" এটি ট্রাম্পের ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতির জন্য ছাড় দিতে চাপ দেওয়ার সর্বশেষ উদাহরণ। ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তিন ঘণ্টা আলোচনা করেছেন ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে। ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেছেন, উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে "গঠনমূলক" আলোচনা হয়েছে, যেখানে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে সরাসরি আলোচনা পুনরারম্ভের সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে। উশাকভের মতে, এই বৈঠক যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অবস্থানের মধ্যে কিছুটা সমন্বয় এনেছে। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলেছেন, আলোচনা ভালো হয়েছে এবং কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু রাশিয়া বা ইউক্রেনেই সীমাবদ্ধ নেই—বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, জ্বালানি সংকট ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই জীবন বাঁচাতে লড়াই করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংকট সমাধানে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখা। খবর আলজাজিরার

#রাশিয়া_ইউক্রেন_যুদ্ধ #ক্রিমিয়া_সংকট #জেলেনস্কি #পুতিন #শান্তি_প্রত্যাশা

news