ইসরায়েলের টানা ২২ মাসের ভয়াবহ হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার পাঁচ শতাধিক স্কুল। শুধু শিক্ষা নয়— এই স্কুলগুলোর অনেকটাই ছিল গৃহহীনদের আশ্রয়ের জায়গা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবেই এই স্কুলগুলো টার্গেট করেছে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, “স্কুলগুলোতে হামলা শুধু শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেনি, বরং ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়ের অধিকারও ছিনিয়ে নিয়েছে।” সংস্থার মতে, এই হামলার ফলে আগামী বহু বছর গাজায় শিক্ষা কার্যক্রম বিপর্যস্ত থাকবে। ধ্বংস হওয়া স্কুলগুলোর পুনর্গঠন ও সংস্কারে বিপুল অর্থ ও সময় লাগবে।
আরও এক ধাপ এগিয়ে সংস্থাটি দাবি করেছে— ইসরায়েলের অবৈধ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ অস্ত্র দিচ্ছে, তাদের উচিত ইসরায়েলের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ থামাতে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানিয়েছে HRW।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করেই ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন ফিলিস্তিনি। অনাহারে মৃত্যু হয়েছে আরও চারজনের। গাজায় এখন পর্যন্ত খাদ্যাভাবে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯৭ জন, যার মধ্যে ৯৬ জনই শিশু।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের অবরোধে জ্বালানি সংকটে ভুগছে গাজার হাসপাতালগুলো। অস্ত্রোপচারের মতো জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া শতাধিক শিশুর জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে।
গত ২২ মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬১ হাজার ২৫৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আজ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে গাজার আরও অঞ্চল দখলের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘ এই পরিকল্পনাকে আখ্যা দিয়েছে “অত্যন্ত উদ্বেগজনক” হিসেবে। সংস্থার ভাষায়, “এই আগ্রাসন শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, এটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।”
গাজা যেন আজ এক ভয়ংকর উদাহরণ— যেখানে স্কুল, হাসপাতাল, শিশুর কান্না— কিছুই আর নিরাপদ নয়।
