সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা ও আসিয়ানের সদস্যপদ অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে বিশ্ব নেতাদের সাথে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) পূরণে কার্যকর অর্থায়ন এখন সময়ের দাবি। এজন্য তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন, যা বাস্তবায়ন করা গেলে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে বুধবার (স্থানীয় সময়) চার দেশের নেতা—ইতালি, পাকিস্তান, ফিনল্যান্ড ও কসোভোর সাথে বৈঠকে অংশ নেন ড. ইউনূস। প্রতিটি আলোচনায় তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট, রাজনৈতিক সংস্কার এবং জুলাই সনদ নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।
ফিনল্যান্ডের সাথে আলোচনায় সার্ক ও আসিয়ান প্রসঙ্গ
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বের সাথে বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, “সার্ককে সক্রিয় করতে ও আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য হতে বাংলাদেশ কাজ করছে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সেতুবন্ধের ভূমিকা পালন করবে।
দুই নেতার আলোচনায় নির্বাচন, রোহিঙ্গা ইস্যু, জাতিসঙ্ঘ সংস্কার, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভুটান-নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা বিষয় উঠে আসে। ইউনূস আশ্বাস দেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ১২ কোটি ভোটারের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
ইতালির সাথে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সাথে বৈঠকে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির আহ্বান জানালে তিনি বাংলাদেশ-ইতালি বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরের আশা প্রকাশ করেন। এ বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের সাথে আঞ্চলিক সহযোগিতা
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাথে বৈঠকে দুই নেতা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক সংস্কার, পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। শরিফ ড. ইউনূসকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
কসোভোর সাথে নতুন চুক্তির সম্ভাবনা
কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানির সাথে বৈঠকে অভিবাসন, বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওসমানি বাংলাদেশকে কসোভোর প্রাথমিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দেন, বিশেষ করে বস্ত্রখাতে। ড. ইউনূস তাকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানান।
যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ আহ্বান
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস রাউন্ড টেবিলে মেটলাইফ, শেভরন ও এক্সেলেরেট এনার্জিসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন ড. ইউনূস।
ক্লাব ডি মাদ্রিদের আমন্ত্রণ
স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দানিলো তুর্ক ড. ইউনূসকে বিশ্বখ্যাত সংগঠন ক্লাব ডি মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিয়ে আপনার মতামত বিশ্ববাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” ইউনূসও তার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।


