আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উপকণ্ঠ এলাকার বাগরামবিমানঘাঁটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, সেটি সামনে এসেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে—তাই এটিকে তাদের ফেরত দিতে হবে। প্রয়োজনে তিনি বাগরাম দখলের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।

২০২১ সালে তালেবান যখন কাবুল ঘিরে ফেলেছিল, তখন মার্কিন সৈন্যরা বাগরাম ঘাঁটি ত্যাগ করে চলে যায়। সম্প্রতি ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি আফগান কর্তৃপক্ষ ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রকে দিলে না, “খারাপ কিছু হবে।”

উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে লিখেছেন—ট্রাম্প বাগরাম নিয়ন্ত্রণ নিতে বারবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং সেটা কেবল আগ্রহ নয়; বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও আছে। কুগেলম্যানের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি দিন দিন চাপ বাড়ায় তবে তারা ঘাঁটি পুনর্দখল করার চেষ্টা করতে পারে, বা প্রয়োজনবোধে এটি ধ্বংস করে দিতে পারে—যা উভয়ের জন্যই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

যদি এমন কোনো অভিযান হয়, তাহলে শক্ত পায়ের লড়াইয়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্দি বিনিময় বা রাজনৈতিক আলোচনাও ভেস্তে যেতে পারে। কুগেলম্যান আরো বলেন, তালেবান কখনোই আলোচনার মাধ্যমে বাগরাম ছাড়বে না—এটি তাদের কাছে ‘রেড লাইন’ (অতিবেদনীয় সীমা)।

গত রোববার আফগান তালেবান সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা কোনো বিদেশি সেনাকে তাদের মাটিতে থাকতে দেবে না। তারা চাইছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিকল্পভাবে বন্দি বিনিময় করে আগ্রহ অর্জন করতে চায়—কিন্তু বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে কোনো আলোচনার দরজা তাদের কাছে বন্ধ।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাগরাম দখল করবার চেষ্টা করে, তাহলে তা চীনকে রোষানলে ফেলবে—চীন এটাকে প্ররোচনামূলক কদম হিসেবে দেখবে। কুগেলম্যানের ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এই ঘাঁটি ব্যবহার করে ইসলামিক স্টেট খোরাসান (ISIS‑K) প্রতিহত করার পরিকল্পনা ভাবছে, কিন্তু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অন্য কিছু জায়গা খুঁজে বের করাই বাঞ্ছনীয়।

এখানেই একটি সঙ্কটজনক বাস্তবতা আছে—যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান থাকলেও এখন তাদের মধ্যে যোগাযোগ খুবই সীমিত। তবুও এই অল্প সংযোগকেই মূল্যবান মনে করা হয়, কারণ সেটার মধ্যেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। কুগেলম্যানের আলোচনাই বলে দেয়, কূটনীতি, কৌশল ও অঞ্চলীয় সংবেদনশীলতা মিলিয়ে বাগরাম কেন্দ্রিক কোনো বড় পদক্ষেপ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বহুবিধ প্রভাব ফেলবে।

(সংক্ষেপে: বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে ট্রাম্পের আংশিক হুঁশিয়ারি, তালেবানের অচল অবস্থান, সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্রীয় অভিযান ও তাতে চীনসহ প্রতিবেশী শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া—সবগুলোই মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই সংবেদনশীল এবং কোনো একক পদক্ষেপ বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে।)

 

news