গাজায় যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তিতে ইসরায়েল ও হামাসের ঐতিহাসিক সমঝোতা ঘোষণার পর সারা বিশ্বের নেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এই চুক্তিকে “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন সূচনা” হিসেবে দেখছে।

এই চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে—এমনটাই জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু চুক্তিটিকে “ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার তার মন্ত্রিসভা এই চুক্তি আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের জন্য বৈঠক করবে।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে—ইসরায়েল যেন দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন করে তা নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন,
“এটি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। জাতিসংঘ চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে, যা মানবিক সহায়তা প্রবাহ বাড়াবে এবং গাজার পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।”

গুতেরেস আরও বলেন,
“এই দুর্ভোগের অবসান হওয়া উচিত। সকল পক্ষকে যুদ্ধবিরতি রক্ষা, জিম্মিদের মুক্তি এবং অবিলম্বে মানবিক সাহায্যের পথ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার এক্স (X)-এ লিখেছেন,
“দারুণ খবর! এখন সময় এসেছে জিম্মিদের মুক্ত করে গাজার মানুষদের দ্রুত সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি এই শান্তি পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা, ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন,
“এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরায়েল, প্রতিবেশী দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক মহান দিন। আমরা কাতার, মিশর এবং তুরস্ককে ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের সঙ্গে থেকে এই ঐতিহাসিক ঘটনা সম্ভব করেছে।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন,
“এই চুক্তি সারা বিশ্বের জন্য গভীর স্বস্তির মুহূর্ত। এখনই সময় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি গড়ে তোলার।”

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ মন্তব্য করেন,
“দুই বছরের রক্তক্ষয়, জিম্মি সংকট ও অসংখ্য প্রাণহানির পর এটি শান্তির পথে এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, সব পক্ষ চুক্তির শর্ত মেনে চলবে।”

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নেতা চাক শুমার বলেন,
“এই চুক্তি জিম্মিদের পরিবার, পুরো ইসরায়েল এবং দীর্ঘদিন ধরে মানবিক বিপর্যয়ে ভোগা ফিলিস্তিনিদের জন্য এক বিশাল স্বস্তি এনেছে।”

এদিকে, ‘হোস্টেজেস ফ্যামিলিজ ফোরাম’, যারা গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির পক্ষে কাজ করছে, এক বিবৃতিতে জানিয়েছে—
“জিম্মিদের মুক্তির পথে এটি এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি।” সংগঠনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্ব ও ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

এই ঐতিহাসিক সমঝোতা মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা—যেখানে প্রতিশোধ নয়, সহযোগিতা ও মানবিকতার জয় ঘটবে।

news