গাজায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধের পথে বড় অগ্রগতি এসেছে। বুধবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন— ইসরায়েল ও হামাস তাঁর প্রস্তাবিত গাজা শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে একমত হয়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় গাজায় হামাসের হাতে আটক সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ইসরায়েল তাদের সেনাদের একটি নির্দিষ্ট সীমারেখায় সরিয়ে নেবে।
এদিকে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলও কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে। পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের জন্য বড় স্বস্তি বয়ে আনবে।
সংসদে ভোট, তারপরই যুদ্ধবিরতি
ইসরায়েলি সরকার গাজা শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণের জন্য আজ জেরুজালেম সময় দুপুর ২টায় বৈঠক ডেকেছে। সংসদে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এরপরই ইসরায়েলি সেনারা সম্মত রেখায় পিছিয়ে যেতে শুরু করবে।
ফিলিস্তিনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, চুক্তির প্রথম পাঁচ দিনে প্রতিদিন অন্তত ৪০০টি করে ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাবে। এতে খাদ্য, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছাবে অসহায় মানুষের হাতে।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনা প্রত্যাহার, শুরু জিম্মি মুক্তি
বিবিসির সহযোগী মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হতে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় লাগবে। সেনারা ফিরলে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দিতে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা শুরু হবে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের আশা, সোমবার থেকেই জিম্মিদের মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে হামাস চাইলে তার আগেও এ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
দুই বছরের রক্তাক্ত ইতিহাস
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় ১,২১৯ জন নিহত হয় বলে ইসরায়েলের দাবি। সে সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যাদের মধ্যে এখনো ৪৭ জন গাজায় আটক রয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করছে, তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন আর জীবিত নেই।
অন্যদিকে, সেই হামলার পর থেকেই গাজায় চালানো ইসরায়েলি অভিযানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৭,১৭৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন— যাদের মধ্যে ২০,১৭৯ জন শিশু।
ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা
গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজা নিয়ে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। এরপর মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়।
টানা তিন দিনের আলোচনার পর বুধবার ইসরায়েল ও হামাস অবশেষে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মত হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বহু বছরের সংঘাতের অবসানে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় শুরু হতে পারে।


