আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আকস্মিক বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে, অর্থাৎ শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ভোরের আগে এ হামলার ঘটনা ঘটে, যা এখন দুই দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম Pakistan Observer জানিয়েছে, অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত এই বিমান হামলায় নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালিবানের (টিটিপি) প্রধান নূর ওয়ালি মেসুদ নিহত হয়েছেন বলে জোর গুঞ্জন চলছে। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ক্বারী সাইফুল্লাহ মেসুদসহ কয়েকজন টিটিপি নেতাও প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, সাইফুল্লাহ মেসুদকে টিটিপির সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে জানা গেছে, কাবুলে নূর ওয়ালি মেসুদের গাড়িকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়। এতে তার গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এখনো তার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি, তবে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার সময় নূর ওয়ালি মেসুদ প্রকাশ্যে গাড়িতে চলাচল করছিলেন। পাকিস্তানে টিটিপি একটি নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন, আর নূর ওয়ালি সেখানে সবচেয়ে বড় ওয়ান্টেড ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।
এই হামলার পর পাকিস্তান আশঙ্কা করছে, টিটিপি শিগগিরই প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে। আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় টিটিপির সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। গত সপ্তাহেই ওই অঞ্চলে টিটিপির হামলায় পাকিস্তানের ১২ সেনা নিহত হন। তার আগেও সেনা অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান কয়েক ডজন টিটিপি জঙ্গিকে হত্যা করেছিল, যা পরে অতর্কিত প্রতিশোধ হামলার জন্ম দেয়।
এরই মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘অনেক হয়েছে, আমরা আর এমন হামলা সহ্য করব না।’ তার এই কড়া বক্তব্যের পরপরই কাবুলে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান।
কাবুলের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা রাতে দুটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এরপর আকাশে সামরিক বিমান চক্কর দিতে থাকে, যা দেখে আরও বড় হামলার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ডিজিএফআই-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী শুক্রবার সকালে পেশোয়ার কর্পস সদরদপ্তরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানা গেছে। তিনি সেখানে কাবুলে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফগান তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট দিয়ে বিস্ফোরণ ও সম্ভাব্য বিমান হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিস্ফোরণের মাত্রা তেমন বড় ছিল না।” তবে স্থানীয় বাসিন্দারা তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলছেন, হামলাটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ভয়াবহ।


