উত্তর চীনের হেনান প্রদেশের আনইয়াং শহরের একটি নার্সিং হোমে ঘটে গেছে এমন এক ঘটনা, যা মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণী মিনি স্কার্ট ও স্কুল ইউনিফর্মের মতো পোশাক পরে প্রবীণদের সামনে প্রাণবন্তভাবে নাচছেন। হাঁটু পর্যন্ত কালো মোজা পরে কোমর দোলাচ্ছেন তিনি।

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, “আমাদের পরিচালক বয়স্কদের ওষুধ খাওয়াতে যা যা করা দরকার, সবই করছেন।” নাচের পরই আরেক কর্মীকে দেখা যায় এক প্রবীণ পুরুষকে ওষুধ খাওয়াতে।

এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নার্সিং হোমটি চরম সমালোচনার মুখে পড়ে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রবীণদের যত্নে থাকা জায়গায় এমন ‘ইঙ্গিতপূর্ণ নাচ’ কীভাবে হতে পারে?

নার্সিং হোমটির ওয়েব প্রোফাইল অনুযায়ী, এটি নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া এক তরুণ পরিচালকের উদ্যোগে গড়ে ওঠা “আনন্দমুখর অবসর নিবাস।” সেখানে লেখা আছে, “আমাদের লক্ষ্য বার্ধক্যের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং প্রবীণদের সুখী রাখা।”

তবে ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। এক নেটিজেন মন্তব্য করেন, “এখন কি প্রবীণ যত্নেও ইঙ্গিতপূর্ণ নাচ ঢুকে পড়েছে?” জবাবে নার্সিং হোমের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টে লেখা হয়, “সবকিছুই ইঙ্গিতপূর্ণ নাচের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।”

গত ২৫ সেপ্টেম্বর নানগুও মেট্রোপলিস ডেইলি–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নার্সিং হোমের পরিচালক স্বীকার করেন যে ভিডিওটি ‘অনুপযুক্ত’। তিনি বলেন, ভিডিওতে দেখা নারী আসলে প্রবীণ যত্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী, কোনো পেশাদার নৃত্যশিল্পী নন।

পরিচালক আরও বলেন, “আমরা সাধারণত প্রবীণদের বিনোদনের জন্য গান গাওয়া, তাস খেলা বা হালকা আড্ডার আয়োজন করি। ভবিষ্যতে এমন ভিডিও প্রকাশে আরও সতর্ক থাকব।”

অন্যদিকে, নার্সিং হোমের আরেক কর্মী জানান, এই ভিডিওগুলোর উদ্দেশ্য ছিল চীনের নার্সিং হোম নিয়ে প্রচলিত ধারণা ভাঙা। “আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম, নার্সিং হোম নিস্তেজ নয়—এখানেও প্রাণবন্ততা আছে। তবে এখন বুঝতে পারছি, এই পদ্ধতিরও নেতিবাচক দিক রয়েছে,” তিনি বলেন।

বিতর্ক বাড়তে থাকায় নার্সিং হোমের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে শতাধিক ভিডিও মুছে ফেলা হয়। এ ঘটনায় আনইয়াং সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর প্রবীণ সেবা বিভাগ জানিয়েছে, পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে দেশটিতে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ৩১ কোটিতে দাঁড়ায়, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশ। ফলে প্রবীণ যত্ন ও নার্সিং হোমগুলোর ভূমিকা এখন দেশজুড়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

 

news