ফ্রান্সে একের পর এক রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন এখন দৈনন্দিন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রীর ধারাবাহিক পদত্যাগ, জাতীয় সংসদে তীব্র বিভাজন আর জনগণের আস্থাহীনতার কারণে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন এখন দেশের সবচেয়ে একঘরে রাজনীতিকদের একজন হয়ে পড়েছেন।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, ম্যাক্রনের ঘনিষ্ঠ অনেক সহযোগীও এখন তার পদত্যাগ দাবি করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ যেন ফ্রান্সের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এক গভীর সংকেত—যেখানে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘন অনিশ্চয়তার ছায়ায় ঢেকে গেছে।
সংসদ ভেঙে নির্বাচনে বিপর্যয়
পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাক্রন জাতীয় সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পরও সংকট আরও গভীর হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, নতুন সংসদ আগের চেয়েও বেশি বিভক্ত—কোনো দলই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
ফলস্বরূপ, মাত্র এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ফ্রান্সে চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি ফ্রান্সে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতার অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সহযোগীদের মধ্যেও ভাঙন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা এদুয়ার ফিলিপসহ অনেকেই মনে করছেন, এই রাজনৈতিক জটিলতা গোটা সরকারের পতনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা সরাসরি বলছেন, “ম্যাক্রনের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।”
তবে ৪৭ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট আপাতত পদ ছাড়তে রাজি নন। বরং তিনি বিরোধীদের চাপে ফেলতে আবারও সংসদ ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন—যা ফ্রান্সের রাজনীতিতে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
গণতন্ত্র কি ভাঙনের পথে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্সের বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে—প্রেসিডেনশিয়াল শাসনব্যবস্থা এখন আর কার্যকর নয়। সংসদে তীব্র বিভাজন, নতুন নতুন দলের উত্থান, আর জনগণের রাজনৈতিক হতাশা—সব মিলিয়ে ম্যাক্রন ক্রমেই বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।
তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এই অচলাবস্থা যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তবে ফ্রান্সের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে।


