চীন ক্রমশ বাড়াচ্ছে তাইওয়ান ঘিরে সামরিক কার্যক্রম, নতুন অস্ত্র তৈরি থেকে শুরু করে প্রযুক্তি উন্নয়ন—সব ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান সেই প্রস্তুতি। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশঙ্কা, বেইজিং এখন এমন সক্ষমতা গড়ে তুলছে, যা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দ্বীপ রাষ্ট্রে আকস্মিক হামলা চালানো সম্ভব হতে পারে। বৃহস্পতিবার ৯ অক্টোবর প্রকাশিত এক সতর্কতামূলক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের পর থেকে চীন অন্তত ছয়বার বড় আকারের সামরিক মহড়া চালিয়েছে দ্বীপটির চারপাশে। এতে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি সাইবার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকৌশলও যুক্ত করা হয়েছে।
হাইব্রিড যুদ্ধকৌশলে তাইওয়ানের ওপর চাপ
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, চীন এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে তাইওয়ানের সাইবার নিরাপত্তা ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও সামরিক নেটওয়ার্কে দুর্বলতা খুঁজে বের করতে উন্নত স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
তাইওয়ানের ভাষায়, চীন ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ কৌশল চালাচ্ছে—যার উদ্দেশ্য জনগণের সরকারের ওপর আস্থা কমানো, প্রতিরক্ষা ব্যয়ের পক্ষে জনসমর্থন হ্রাস করা এবং জনগণের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
এছাড়া, তারা ‘গ্রে জোন’ কৌশলও প্রয়োগ করছে—যেমন উপকূলরক্ষী টহল বা সামুদ্রিক নজরদারি, যা সরাসরি যুদ্ধ নয়, কিন্তু তাইওয়ানের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে রাখে।
সামরিক মহড়ায় লুকিয়ে থাকতে পারে বাস্তব যুদ্ধের ইঙ্গিত
তাইওয়ানের সতর্কবার্তায় বলা হয়, বেইজিং কোনো সময় হঠাৎই একটি সামরিক মহড়াকে বাস্তব যুদ্ধ অভিযানে রূপ দিতে পারে। এতে তাইওয়ানসহ তার আন্তর্জাতিক মিত্ররা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে যাবে, যা পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবে।
এছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন এখন বেসামরিক মালবাহী জাহাজগুলোকে সামরিক পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সৈন্য ও অস্ত্রবাহী যান নামানোর জন্য বিশেষ উপকূলীয় অবতরণ সরঞ্জাম তৈরি করছে।
তাইওয়ান আশঙ্কা করছে, এই সমন্বিত সামরিক প্রস্তুতি আসলে ভবিষ্যৎ আক্রমণের মহড়া হতে পারে। তবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
তাইওয়ান-চীন উত্তেজনা চরমে
চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে দৃঢ়ভাবে বেইজিংয়ের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার ভাষায়, “তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এখানকার জনগণই, বাইরের কেউ নয়।”
এ অবস্থায়, চীন ও তাইওয়ানের সম্পর্ক আবারও নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যা গোটা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


