বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মাত্রা পেল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন—চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০% শুল্ক আরোপ করা হবে। এটি কার্যকর হবে ১ নভেম্বর বা তার আগে থেকেই। এই শুল্ক বর্তমান ৩০% শুল্কের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হবে।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কয়েক মাসের “বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি” কার্যত শেষ হয়ে গেল। শুক্রবার বিকেলে নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করবে—বর্তমান যে কোনো শুল্কের ওপরেও। পাশাপাশি ১ নভেম্বর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ জারি করা হবে।”

এই ঘোষণার পেছনে বড় কারণ চীনের পক্ষ থেকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ‘রেয়ার আর্থ’ বা বিরল খনিজ উপাদানের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উৎপাদনে এই উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘোষণার জেরেই এই মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর শুক্রবার বাজারে নেমে আসে বড় ধাক্কা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন শেয়ারবাজারে ডাও জোন্স সূচক ৮৭৮ পয়েন্ট বা ১.৯% কমে বন্ধ হয়। এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক পড়ে ২.৭% এবং প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক সূচক পড়ে ৩.৫%।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি। যদিও মেক্সিকো এখন চীনকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানি উৎসে পরিণত হয়েছে, তবুও আমেরিকার শত শত বিলিয়ন ডলারের পণ্যের জন্য এখনো চীনের ওপর নির্ভরশীলতা ব্যাপক। একইভাবে চীনও মার্কিন পণ্যের বড় বাজার।

ইলেকট্রনিক্স, পোশাক ও আসবাবপত্র—এই তিন ধরনের পণ্যেই চীন থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প সব সময় প্রযুক্তি খাতের সিইওদের উৎপাদন দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি কিছুটা নরম হয়েছেন। কারণ, বড় বড় কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে—যদিও তারা উৎপাদনের বড় অংশ এখনো বিদেশেই করছে।

চীনা পণ্যের ওপর মোট ১৪৫% শুল্ক আরোপের পর ইলেকট্রনিক্স খাতে কিছুটা ছাড় দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এসব পণ্যে ২০% হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে স্পষ্ট হয়ে যায়—উচ্চ শুল্কে মার্কিন বাজারে যে চাপ তৈরি হচ্ছে, তা হোয়াইট হাউস বুঝতে পেরেছে।

পরে মে মাসে দুই দেশ পারস্পরিক শুল্ক কমানোর মাধ্যমে কিছুটা শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছায়। চীন মার্কিন রপ্তানিতে শুল্ক ১২৫% থেকে কমিয়ে ১০% করে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রও চীনা পণ্যে শুল্ক ১৪৫% থেকে কমিয়ে ৩০% করে আনে। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন ঘোষণায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠল দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক—এবার আরও ভয়াবহ আকারে।

 

news