ইউরোপে অবৈধ পথে যাওয়া মোট অভিবাসীর সংখ্যা কমলেও, বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছানো মানুষের তালিকায় আবারও শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। ইউরোপের সীমান্ত রক্ষাকারী সংস্থা ফ্রনটেক্সের নতুন রিপোর্টে এই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে।

রিপোর্ট বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার সামগ্রিকভাবে ইউরোপে অবৈধ অনুপ্রবেশ ২২% কমেছে। কিন্তু এই সংখ্যা কমলেও, মধ্য ভূমধ্যসাগরের ভয়ঙ্কর রুট দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে! জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই পথে ইউরোপে পৌঁছেছেন ৫০ হাজার ৮৫০ জন বাংলাদেশি, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২% বেশি।

মাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই এই পথ দিয়ে ইউরোপে ঢুকেছেন ৮ হাজারেরও বেশি মানুষ।

ফ্রনটেক্সের প্রাথমিক হিসাব বলছে, এই বছরের প্রথম নয় মাসে মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ জন অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। কড়া নজরদারি ও সীমান্ত কঠোর করার কারণেই সামগ্রিকভাবে এই সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। অবৈধ অভিবাসনের দিক দিয়ে শীর্ষ তিন দেশ হলো বাংলাদেশ, মিশর ও আফগানিস্তান।

ফ্রনটেক্স স্পষ্টই বলেছে, মধ্য ভূমধ�সাগর রুটে আসা বেশিরভাগ মানুষই বাংলাদেশি নাগরিক। যদিও সামগ্রিকভাবে অবৈধ প্রবেশ কমেছে, তবে কিছু নির্দিষ্ট রুটে বেড়েছে উদ্বেগ। পশ্চিম আফ্রিকা রুটে অনুপ্রবেশ ৫৮% কমলেও, পশ্চিম ভূমধ্যসাগর রুট দিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ২৮% বেড়ে গেছে! এই রুটে আসা বেশিরভাগ মানুষই আলজেরিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেন।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসন সংখ্যায় কিছুটা কমলেও মানবিক বিপর্যয় কিন্তু কমেনি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, শুধু এই সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১,২৯৯ জন। এই ভয়াবহ সংখ্যাটি প্রমাণ করে, ইউরোপের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে মানুষ এখনও মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নিচ্ছে।

ফ্রনটেক্স রিপোর্টে আরও একটি ভয়ের কথা জানানো হয়েছে। ফ্রান্স হয়ে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে ব্রিটেনে যাওয়ার চেষ্টা ১৪% বেড়ে গেছে। এই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৩০০ জন এই বিপজ্জনক পথে যুক্তরাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, ইউরোপের কঠোর নজরদারি এবং আফ্রিকার কিছু দেশের সীমান্ত শক্ত করার কারণে মানব পাচারকারীরা এখন নতুন নতুন পথ বের করছে, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ অভিবাসীদের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

 

news