দীর্ঘ দুই বছরের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা আর গৃহহীন জীবনের পর অবশেষে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীরা ফিরতে শুরু করেছেন নিজেদের বিধ্বস্ত ঘরে। কিন্তু এই ফেরা কোনো সুখের যাত্রা নয়। চারিদিকে শুধুই ধ্বংসস্তূপ, প্রিয়জন হারানোর গভীর বেদনা আর এক অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কা বুকে নিয়ে তারা বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন।

গতকাল, শুক্রবার গাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরই এই প্রত্যাবর্তন শুরু হয়।

"ফিরছি ক্ষত আর বেদনা নিয়ে, তবু আল্লাহর শুকরিয়া"
গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়িতে ফেরার পথে ফিলিস্তিনিরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন তাদের মিশ্র অনুভূতির কথা।

৩২ বছর বয়সী আমির আবু ইইয়াদে ভারাক্রান্ত মনে বলেন, “আমরা এই পরিস্থিতির জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। যদিও আমরা ফিরছি ক্ষত আর বেদনা নিয়ে।”

৩৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ মরতাজা বলেন, তিনি শুধু প্রার্থনা করছেন যেন গাজা নগরীতে ফিরে গিয়ে দেখেন তার বাড়িটি অন্তত ধ্বংস হয়নি। তিনি আরও জানান, “আমাদের একটাই আশা— যুদ্ধ যেন চিরতরে শেষ হয়, যাতে আর কখনো আমাদের পালাতে না হয়।”

৫৩ বছর বয়সী আরিজ আবু সাদাহ যুদ্ধের শুরুতেই বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি ও শান্তির জন্য আমি খুশি। যদিও আমি এক ছেলেসহ স্বজন হারিয়েছি। তবু এই যুদ্ধবিরতি কিছুটা আনন্দও এনেছে—আমাদের ঘরে ফেরার আনন্দ।”

আহমেদ নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আমাদের এলাকায় গিয়েছিলাম—ওটা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন আমরা কোথায় যাব, জানি না।”

তিনি আরও জানান, “আমরা কোনো আসবাব, কাপড়চোপড়—কিছুই নিতে পারিনি, এমনকি শীতের পোশাকও না। কিছুই অবশিষ্ট নেই।”

শতাধিক মরদেহ উদ্ধার, শান্তির বার্তা ট্রাম্পের
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেনারা পিছু হটার পর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “এই শান্তিচুক্তি শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, বরং আরব, মুসলিমসহ সবার জন্যই দারুণ—পুরো বিশ্বের জন্যও এটি একটি ইতিবাচক চুক্তি।”

হোয়াইট হাউস থেকে শুক্রবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানান, গাজায় আটক থাকা ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দি আগামী সোমবার মুক্তি পাবে।

 

news