আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল ও পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটনার পর নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সম্পর্কে। তালেবান সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে এ হামলার জন্য দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ এখনো পর্যন্ত অভিযোগটি স্বীকার বা অস্বীকার—দুই-ই করেনি।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, কাবুল ও পাকতিকায় ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের জন্য পাকিস্তানই দায়ী। তবে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এর আগের দিন তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে বলেন, “কাবুলে একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, বিষয়টি তদন্তাধীন। জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
তবে পরদিন আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে পাকিস্তানের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হলে পরিস্থিতি হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটেছে, যখন তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমেই উষ্ণ হচ্ছে, যা পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থানকে অস্বস্তিকর করে তুলেছে।
ঠিক বৃহস্পতিবারই তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ছয় দিনের সফরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর এটাই ছিল তার প্রথম ভারত সফর। কাকতালীয়ভাবে, সেই দিনই কাবুলে ঘটে বিস্ফোরণ—যা ইসলামাবাদের উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
বিস্ফোরণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের ধারণা, পাকিস্তান তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদসহ শীর্ষ কয়েকজনকে টার্গেট করে এ হামলা চালিয়েছে। যদিও পরে আফগান কর্মকর্তারা জানান, মেহসুদ নিরাপদেই আছেন।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমদ শরিফ এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন,
“আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। আমাদের হাতে প্রমাণ রয়েছে, জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তবে তিনি আফগানিস্তানে হামলা চালানো হয়েছে কি না—সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা এ বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বহুদিন ধরেই টানাপোড়েনপূর্ণ। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে, কাবুল টিটিপি-কে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানের সেনাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। বিপরীতে, তালেবান দাবি করে পাকিস্তান তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে, আফগান ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে।
সীমান্তে বারবার সংঘর্ষ ও সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনায় বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, দক্ষিণ এশিয়া নতুন এক কূটনৈতিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে, বিশেষ করে ভারত-তালেবান ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে।


