নিউইয়র্ক সিটির ২৬ ফেডারেল প্লাজা আদালত ভবনে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার ভিডিও এখন ভাইরাল। সেখানে দেখা গেছে, অভিবাসন কর্মকর্তারা আদালতের ভেতরেই এক ব্যক্তিকে আটক করছেন, আর তাঁর স্ত্রীকে জোর করে মাটিতে ফেলে দিচ্ছেন।
ওই নারী, মনিকা মোরেটা গালার্জা, বলছেন—“তারা আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছে।”
ঘটনাটি ঘটেছিল তাঁর স্বামী রুবেন আবেলার্ডো অরটিজ লোপেজের অভিবাসন শুনানি শেষে। আদালতের বিচারক সেদিন লোপেজকে পরে ফেরার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা দেখে পরিবারটি ভেবেছিল—তিনি হয়তো নির্বাসন থেকে রেহাই পেয়েছেন। কিন্তু আদালত ভবন থেকে বেরোনোর মুহূর্তেই অভিবাসন কর্মকর্তারা হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে লোপেজকে আটক করে নিয়ে যান।
মনিকা বলেন,
“একজন কর্মকর্তা এত জোরে আমাকে ধাক্কা দেন যে আমি পড়ে যাই। তারা আমাদের সন্তানদের সামনেই এটা করেছে।”
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে, ফলে সংশ্লিষ্ট অভিবাসন কর্মকর্তাকে অস্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কিন্তু আইনজীবীদের মতে, এটি কোনো একক ঘটনা নয়। নিউইয়র্কের অভিবাসন আদালত ভবনে এ ধরনের “অত্যধিক আগ্রাসী আচরণ” এখন প্রায় নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিউ ইয়র্ক লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপের আইনজীবী অ্যালিসন কাটলার বলেন,
“আমরা যে পরিবারগুলোর জন্য লড়াই করি, তাদের এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হতে দেখা ভয়াবহ।”
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের সামনেই অভিবাসীদের ওপর আগ্রাসী অভিযান চালিয়েছে আইসিই ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট।
আগস্টের শেষের দিকে, আদালতের বাইরে থাকা সাংবাদিকরা দেখেন—একদল কর্মকর্তা এক নারী, এক পুরুষ ও এক শিশুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুরুষটিকে আটক করছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে কান্নায় ভেঙে পড়া মহিলাকে একজন কর্মকর্তা টেনে সরিয়ে দেন।
ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ জানায়, তাদের কর্মকর্তারা “শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব গুরুত্বসহকারে পালন করেন” এবং আটক বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের সাথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
কিন্তু কয়েকদিন পর আরও একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় সাংবাদিকদের ওপরও শারীরিক হামলা করা হচ্ছে। দুই সাংবাদিকের একজন হাসপাতালে ভর্তি হন।
ফটোসাংবাদিক ওলগা ফেদোরোভা বলেন, “আমরা আগে কখনও এমনটা দেখিনি। সাধারণত ফেডারেল এজেন্টরা সহযোগিতাপূর্ণ থাকেন, কিন্তু এবার তারা ভয়ানক আচরণ করেছেন।”
ডিএইচএস মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন দাবি করেন, সাংবাদিক ও প্রতিবাদকারীরা কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দিয়েছিলেন, তাই পরিস্থিতি “নিয়ন্ত্রণে আনতে” বলপ্রয়োগ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গণ-নির্বাসন নীতি’ এই পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করেছে।
ডিপোর্টেশন ডেটা প্রজেক্টের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নিউইয়র্কে আটক হওয়া অভিবাসীদের অর্ধেকই ধরা পড়েছেন এই ২৬ ফেডারেল প্লাজা ভবনে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়—গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় তিন-চতুর্থাংশ অভিবাসীর কোনো অপরাধমূলক রেকর্ডই ছিল না।
আইনজীবীরা বলছেন, অভিবাসীরা এখন এক অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তারা গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় পাচ্ছেন, আবার হাজিরা না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাসনের আদেশ চলে আসে।
সরকার অবশ্য দাবি করছে, তারা কেবল অপরাধপ্রবণ ও অবৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীদের লক্ষ্য করছে। ট্রাম্প প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়,
“যদি কেউ অবৈধভাবে আমাদের দেশে এসে আইন ভঙ্গ করে, আমরা তাকে গ্রেপ্তার করব এবং সে আর কখনও ফিরে আসতে পারবে না।”
তবে মনিকা মোরেটা গালার্জা বলছেন, এই ঘটনার পর তিনি যেন আবার তাঁর দেশ ইকুয়েডরের ভয়ঙ্কর স্মৃতিতে ফিরে গেছেন।
“আমার মনে হচ্ছে, আমি এখন এই দেশেও মূল্যহীন একজন মানুষ। আমি কখনও ভাবিনি আমেরিকায় এমন আচরণের শিকার হতে হবে,”—চোখ ভিজে যায় তাঁর কথায়।


