ইসরায়েলের হামলায় দক্ষিণ লেবাননের ব্লেইদা শহরে এক পৌর কর্মচারী নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা চরমে। এই ঘটনার পরই লেবাননের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জোসেফ আউন সেনাবাহিনীকে এক কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন—ইসরায়েলি যেকোনো অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে সরাসরি মোকাবিলায় নামতে হবে।

এই নির্দেশকে “নজিরবিহীন” বলে আখ্যা দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা, কারণ দীর্ঘ সময় পর লেবাননের রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে এমন সরাসরি সামরিক প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হলো।

ইসরায়েলি হামলা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি

সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত এলাকায় সামরিক অভিযান চালায়। এতে ব্লেইদা পৌরসভায় কর্মরত ইব্রাহিম সালামা নিহত হন। এর পরপরই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় বোমাবর্ষণ করে এবং দাবি করে—তারা “হিজবুল্লাহ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো” লক্ষ্যবস্তু করেছে।

এই ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট আউনের নির্দেশে সেনাবাহিনীকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়—ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

কেন এই নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ

গত কয়েক দশকে লেবাননের সেনাবাহিনী সরাসরি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়নি। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিরোধে মূল ভূমিকা পালন করেছে হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য প্রতিরোধ বাহিনী।

তবে এবার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামার নির্দেশ রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই বড় ইঙ্গিত বহন করছে। যদিও বাস্তবে লেবাননের সামরিক সক্ষমতা ইসরায়েলের তুলনায় অনেক কম। দেশটির সেনারা এখনো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ পরিচালনার মতো প্রস্তুত নয়।

সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া

এক বিবৃতিতে লেবাননের সেনাবাহিনী এই হামলাকে “অপরাধমূলক, সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের অপমান” বলে উল্লেখ করেছে।
তারা জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটিকে ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

লেবাননের সামরিক শক্তি ও সীমাবদ্ধতা

লেবাননের সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর, তবে বাস্তবে তারা বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র লেবানন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক—যারা তাদের বেতন, হালকা অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে সহায়তা করে।

বর্তমানে সেনাবাহিনীতে প্রায় ৫০,০০০ সদস্য রয়েছে। তাদের কাছে কোনো যুদ্ধবিমান নেই, আর হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৭০টিরও কম—যেগুলোর বেশিরভাগই উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যবহৃত হয়। স্থলবাহিনীতে আছে প্রায় ২০০ ট্যাংক ও হাজারো সাঁজোয়া যান, যেগুলোর বেশিরভাগই সোভিয়েত আমলের পুরোনো সরঞ্জাম।

ইসরায়েলের দৃষ্টিতে লেবাননের সেনাবাহিনী

ইসরায়েলের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আসাফ ওরিয়ন লেবাননের সেনাবাহিনীকে “একটি বশীভূত বাহিনী” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যাকে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতিসংঘ সহায়তা দেয়।
ইসরায়েলি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আলমা সেন্টারের গবেষণা বিভাগের প্রধান তাল বেইরি বলেন, “লেবানন সেনাবাহিনীর অস্ত্র এতটাই পুরোনো যে, তা ইসরায়েলের জন্য কোনো বাস্তব হুমকি নয়।”

যুদ্ধ নাকি কূটনীতি?

এই নির্দেশ এসেছে এমন সময়ে, যখন লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে এবং গত নভেম্বরের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এখন প্রশ্ন একটাই—লেবাননের সেনাবাহিনী কি সত্যিই নতুন সংঘর্ষের পথে যাচ্ছে, নাকি এই নির্দেশ কেবল ইসরায়েলকে কূটনৈতিকভাবে সতর্ক করার একটি বার্তা? সময়ই বলে দেবে, লেবানন যুদ্ধের পথে হাঁটবে কিনা, নাকি রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করেই থামবে।

 

news