গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্কে রুশ সেনারা ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের জেনারেল ওলেক্সান্দর সিরস্কি। এই শীর্ষ কমান্ডার বলেন, তার সেনারা সেখানে খুব কঠিন পরিস্থিতির মুখে। হাজার হাজার রুশ সেনা জড়ো হওয়ায় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
‘গ্রে জোন’-এ পরিণত পোকরোভস্ক একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ ও সরবরাহ কেন্দ্র। শহরটা দখল করলে রাশিয়া পুরো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে বড় সুবিধা পাবে।
এদিকে মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করছে এবং হেলিকপ্টার থেকে নামার পর তাদের ১১ জন বিশেষ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। কিন্তু কিয়েভ এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।
শনিবার টেলিগ্রামে পোস্ট করে জেনারেল সিরস্কি জানান, পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্কে সামরিক কমান্ডারদের কাছ থেকে সর্বশেষ খবর নিতে তিনি আবার ফ্রন্টলাইনে গেছেন।
রুশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইনে হামলা করায় সেগুলো রক্ষায় বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান কমান্ডার।
একটা ছোট ভিডিওতে দেখা যায়, সিরস্কি সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভসহ অন্য কমান্ডারদের সঙ্গে যুদ্ধের মানচিত্র দেখছেন। তবে ভিডিওটা কবে কোথায় করা, বিবিসি তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
রাশিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে শহরটা দখলের চেষ্টা করছে। বিশেষ বাহিনী মোতায়েন দেখে বোঝা যায়, কিয়েভ যে কোনো মূল্যে পোকরোভস্ক ধরে রাখতে চায়।
বিশেষ বাহিনীর অভিযান তদারকি করতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কিরিলো বুদানভের থাকার খবর আগেই দিয়েছে ইউক্রেনীয় মিডিয়া।
শনিবার ইউক্রেনের ৭ম র্যাপিড রেসপন্স কর্পস জানিয়েছে, পোকরোভস্কে তাদের ‘কৌশলগত অবস্থান উন্নত’ হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি এখনো ‘কঠিন ও পরিবর্তনশীল’।
শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, পোকরোভস্কের প্রতিরক্ষা এখন ‘অগ্রাধিকার’।
রাশিয়া-দখলকৃত দোনেৎস্কের পশ্চিমে এই কৌশলগত শহরে রুশ অগ্রগতির খবর বাড়ছে।
শুক্রবার রাতে শেয়ার করা ছবিতে দেখা যায়, একটা ইউক্রেনীয় ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার পোকরোভস্কের কাছে প্রায় ১০ জন সেনা নামাচ্ছে। ছবির স্থান-সময় যাচাই হয়নি।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, পোকরোভস্কের উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা বিশেষ বাহিনীর অবতরণ ব্যর্থ করে ১১ জনকে হত্যা করেছে।
ইউক্রেনের ওপেন-সোর্স গ্রুপ ডিপস্টেট অনুমান করে, পোকরোভস্কের প্রায় অর্ধেক এলাকা ‘গ্রে জোন’-এ, কোনো পক্ষের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেই।
দোনেৎস্কের এক সামরিক সূত্র বিবিসিকে বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী ঘেরাও হয়নি, কিন্তু সরবরাহ লাইনে রুশ গোলাবর্ষণ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) বলছে, সাম্প্রতিক পালটা আক্রমণে পোকরোভস্কের উত্তরে ইউক্রেন সামান্য এগিয়েছে, কিন্তু শহরটা এখনো ‘ধূসর এলাকা’।
মস্কো চায় দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক (দোনবাস) কিয়েভ শান্তিচুক্তিতে রাশিয়ার হাতে তুলে দিক – এমনকি যেগুলো এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।
কিয়েভ মনে করে, পোকরোভস্ক দখল করে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে দেখাতে চায় তাদের অভিযান সফল, যাতে পশ্চিমা দেশরা দাবি মেনে নেয়।
ক্রেমলিনের শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ। ফলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার দুই বড় তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এবং পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন।
জেলেনস্কি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি – যাতে বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামিয়ে স্থিতাবস্থা আনা হবে।
কিন্তু পুতিন প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এখনো সেই দাবিতে অনড়, যা কিয়েভ ও পশ্চিমারা ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ বলে মনে করে।
