জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৫ বছরের উমর উন-নবী, যাকে পরিবার ‘শান্ত ও পড়াশোনায় মনোযোগী’ বলে জানে, তাকেই সন্দেহ করা হচ্ছে সোমবার লালকেল্লার কাছে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের মূলচালক হিসেবে।
বুধবার হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পেশায় চিকিৎসক উমরই সেই হুন্দাই আই২০ গাড়িটা চালাচ্ছিলেন। সোমবার দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে বিস্ফোরণে সেই গাড়িটাই ব্যবহার হয়। হামলায় অন্তত ১০ জন মারা গেছেন, অনেকে আহত।
কয়েকদিন আগে হরিয়ানার ফরিদাবাদে যে বড় অভিযান হয়েছিল, তাতে প্রায় ৩,০০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হয়—এর সঙ্গেও উমরের যোগ আছে বলে অভিযোগ। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে একটা ‘হোয়াইট-কলার জঙ্গি নেটওয়ার্ক’ ধরা পড়ে, দুই ডাক্তারসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লালকেল্লার বিস্ফোরণের আগে ফরিদাবাদে ধরা পড়া জঙ্গি মডিউলের সঙ্গে উমরের সরাসরি লিঙ্ক ছিল দুই ডাক্তারের মাধ্যমে।
তাদের মধ্যে একজন আদিল আহমেদ রাথের—উমর তাকে চিনতেন অনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজ (জিএমসি) থেকে, যেখানে দুজনেই সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার ছিলেন।
আদিল কাশ্মীরের আরেক ডাক্তার মুজাম্মিল শাকিল গণাইয়ের সঙ্গে ফরিদাবাদের জায়গাটা বিস্ফোরক রাখার জন্য ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ।
আর মুজাম্মিলের সঙ্গে উমরের ঘনিষ্ঠতা ছিল—দুজনেই পুলওয়ামার একই গ্রামের, ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একসঙ্গে কাজ করেছেন।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের এক অফিসার বলেন, তিন ডাক্তার মিলে পুলওয়ামা থেকে এনসিআর পর্যন্ত একটা জঙ্গি লজিস্টিক নেটওয়ার্ক চালাতেন। এটা জইশ-ই-মোহাম্মদ(জেইএম-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল।
লালকেল্লার বিস্ফোরণ আর ফরিদাবাদের অভিযানের লিঙ্ক পাওয়ার পর তদন্তকারীরা জেনেছেন, ফরিদাবাদে তল্লাশির পর উমর ‘আতঙ্কিত’ হয়ে পড়েন।
পুলিশের সন্দেহ, সে প্রমাণ সরানোর বা নষ্ট করার চেষ্টা করেছে এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, জ্বালানি তেল আর ডেটোনেটর নিয়ে দিল্লিতে ঢোকে।
বড় অভিযানে ফরিদাবাদ আর জম্মু-কাশ্মীরে তার সঙ্গীদের ধরা পড়লেও উমর পালিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশের নজরে থাকার ভয়ে সে ‘তাড়াহুড়ো করে’ দিল্লির বিস্ফোরণটা ঘটিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশ না করা এক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘দিল্লি-এনসিআর আর পুলওয়ামার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান, প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার—এসব চাপে সন্দেহভাজন ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করে কাজটা করেছে বলে মনে হচ্ছে।’
লালকেল্লায় উমর যে বোমা ব্যবহার করেন, সেটা ‘প্রিম্যাচিউর’ ছিল কারণ তিনি ‘আতঙ্ক আর হতাশায়’ কাজ করছিলেন, বলেন তিনি।
এদিকে পুলিশ নিশ্চিত করেছে, লালকেল্লার বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হুন্দাই আই২০ গাড়িটা উমরই চালাচ্ছিলেন। আর বিস্ফোরকগুলো ফরিদাবাদে উদ্ধার হওয়া একই চালানের।
তদন্তকারীদের মতে, উমর উন-নবী অনেকদিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন। তিনি পাঁচটা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতেন, ৩০ অক্টোবরের পর সব বন্ধ। তারপর থেকে পেশার কাজ করেননি। ৯ নভেম্বর ফরিদাবাদে অভিযানে ২,৯০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ডেটোনেটর, টাইমার আর রাইফেল উদ্ধারের পর আত্মগোপনে চলে যান।
