ইসরায়েলি কারাগারে আটক অবস্থায় ভয়ংকর যৌন নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনি নারী বন্দিরা—সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া এক নারীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এমনই হৃদয়বিদারক চিত্র।

প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস  সেই সাবেক বন্দির সাক্ষ্য নথিভুক্ত করেছে। ওই বর্ণনায় উঠে এসেছে ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা ধর্ষণ, জোর করে নগ্ন করা, নগ্ন অবস্থায় ভিডিও ধারণ, কুকুর ও বিভিন্ন বস্তু ব্যবহার করে যৌন নির্যাতন—সব মিলিয়ে এক পদ্ধতিগত সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র।

৪২ বছর বয়সী এক নারী, যিনি নিরাপত্তার কারণে “এন.এ.” ছদ্মনামে পরিচিত, জানান—গত নভেম্বর মাসে উত্তর গাজার একটি তল্লাশি চৌকিতে ইসরায়েলি সেনারা তাকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর কারাগারে কমপক্ষে চারবার ধর্ষণ, ইলেকট্রিক শক, মারধর এবং বারবার অশ্লীল গালিগালাজের শিকার হন তিনি।

তিনি বলেন,

“আমাকে কাপড় খুলে একটি ধাতব টেবিলের সঙ্গে হাতকড়া পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়। একজন পুরুষ আমাকে ধর্ষণ করছিল, আমি চিৎকার করলে তারা চোখ বেঁধে পিঠ ও মাথায় আঘাত করে।”

ধর্ষণের পর তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পোশাকহীন অবস্থায় হাতকড়া পরিয়ে ঘরে ফেলে রাখা হয়।
তার ভাষায়, “আমি তিন দিন যে ঘরে ছিলাম, পুরো একদিন আমাকে নগ্ন রাখা হয়েছিল। তৃতীয় দিনও পোশাক ছাড়াই রেখেছিল তারা। সৈন্যরা দরজার ফাঁক দিয়ে তাকাতো এবং ভিডিও করতো। এক সেনা হুমকি দিয়েছিল, ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবে।”

শুধু নারীরা নয়, পুরুষ বন্দীরাও নির্যাতনের শিকার

পিসিএইচআর জানিয়েছে, যৌন সহিংসতার শিকার শুধু নারী বন্দীরাই নয়।
১৮ বছর বয়সী এক পুরুষ বন্দী, ছদ্মনাম “এম.এ.”, জানিয়েছেন—গাজার একটি মানবিক সহায়তা কেন্দ্রে তাকে এবং আরও ছয়জনকে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়, এরপর ইসরায়েলি সেনারা বোতল ব্যবহার করে মলদ্বারে যৌন নির্যাতন করে।

আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি

এই ভয়াবহ নির্যাতনের পর পিসিএইচআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে—
ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর চলা পদ্ধতিগত যৌন সহিংসতা, নির্যাতন ও জোরপূর্বক গুম বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে।

সংস্থাটি ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সকল ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া, গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবস্থান প্রকাশ করা এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রসকে সব বন্দীশিবিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া তারা সতর্ক করেছে, ইসরায়েলি পার্লামেন্টে সন্ত্রাসবাদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের খসড়া আইন পাস হলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীর জীবন আরও বড় ঝুঁকিতে পড়বে।

 

news