মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সোমালি অভিবাসীদের নিয়ে বিতর্কিত কথাবার্তা বলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর। তিনি ট্রাম্পের মন্তব্যকে সরাসরি “ভয়ঙ্কর” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকেই শুরু ট্রাম্পের বর্ণবাদী আক্রমণ
মঙ্গলবার এক মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প নতুন করে সোমালি আমেরিকানদের টার্গেট করে বলেন, ইলহান ওমর ও অন্যান্য সোমালি অভিবাসীরা নাকি “আবর্জনা” এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত।
ওমর সোশ্যাল মিডিয়ায় জবাব দেন—
“আমার প্রতি তার আবেগ ভয়ঙ্কর। আশা করি তিনি প্রয়োজনীয় সাহায্য পাবেন।”
ওয়াশিংটনে সৈন্য হত্যার ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্পের নতুন প্রচারণা
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প তার অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য আরও জোরদার করেছেন। গত মাসে ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সন্দেহভাজন একজন আফগান নাগরিক, যাকে ২০২১ সালে মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান ছাড়ার পর সরিয়ে আনা হয়েছিল।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প সোমালিয়াসহ “তৃতীয় বিশ্বের দেশ” থেকে অভিবাসনকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি বলে দাবি করেন।
ট্রাম্পের ভাষায়—
“আমরা যদি দেশে আবর্জনা ঢুকিয়ে রাখতে থাকি, তাহলে আমেরিকা ভুল পথে যাবে। ওমর আবর্জনা। তার বন্ধুরাও আবর্জনা।”
‘ওরা কাজ করতে চায় না’—ট্রাম্পের আরও কটূক্তি
ট্রাম্প বলেন, এই অভিবাসীরা নাকি আমেরিকার উন্নতি চায় না, শুধু অভিযোগ করে।
তিনি দাবি করেন, “ওমরকে আমি চিনি না। তবে বছরের পর বছর তাকে শুধু অভিযোগ করতে দেখেছি। সে একেবারেই অযোগ্য, ভয়ঙ্কর একজন মানুষ।”
শরণার্থী থেকে কংগ্রেসে—ইলহান ওমরের গল্প
সোমালিয়ার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে শিশু অবস্থায় আশ্রয় নেন ওমর। পরে তিনি মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত হওয়া প্রথম সোমালি–আমেরিকান হন। তিনি মিনেসোটার সেই জেলা প্রতিনিধিত্ব করেন, যেখানে দেশের সবচেয়ে বড় সোমালি প্রবাসী জনসংখ্যা থাকে।
সোমালি সম্প্রদায়ের অগ্রগতি লুকানো যায় না
২০২১ সালের মিনেসোটা চেম্বার অফ কমার্সের রিপোর্ট বলছে—
আগে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ থাকলেও দুই দশকে সোমালিদের পরিস্থিতি ব্যাপক উন্নত হয়েছে।
দারিদ্র্য কমেছে, কর্মী অংশগ্রহণ বেড়েছে, আয় বেড়েছে, শিক্ষায়ও উন্নতি হয়েছে।
তারপরও কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেন ট্রাম্প
ন্যাশনাল গার্ড হত্যাকাণ্ডের পর ট্রাম্প “তৃতীয় বিশ্ব” দেশগুলো থেকে অভিবাসন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ১৯টি দেশের স্থায়ী বাসিন্দাদের স্ট্যাটাস পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশও দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রথম ও বর্তমান স্ত্রী—দু’জনই ইউরোপীয় অভিবাসী।
সোমালিদের সঙ্গে বহুদিনের বিরোধ
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পাঁচটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসহ উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার ওপর কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সেই ber হওয়া “মুসলিম ব্যান”-এ সোমালিয়াও ছিল।
সম্প্রতি তিনি কোভিড–যুগের একটি ফুড–এইড কেলেঙ্কারিতে জড়িত কিছু সোমালির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো সম্প্রদায়কেই দোষারোপ করেন।
ওমর বহুদিন ধরেই ট্রাম্পের টার্গেটে
২০১৯ সালে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন—
“যেখানে থেকে তারা এসেছে, সেই ভাঙা জায়গায় ফিরে গিয়ে ঠিক করে আসুক।”
ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন মিনেসোটায় আইসিই অভিযান বাড়িয়েছে, যা স্থানীয়দের মতে সোমালিদের টার্গেট করছে।
হিজাব নিয়ে কটূক্তিও করলেন ট্রাম্প
ট্রাম্প ওমরের হিজাব নিয়েও কটূক্তি করে বলেন—তিনি নাকি “সবসময় তার হিজাবে ঢেকে” থাকেন।
জাস্টিস ডেমোক্র্যাটসের কড়া প্রতিক্রিয়া
প্রগতিশীল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস ট্রাম্পের এই হামলাকে “জঘন্য বর্ণবাদী” বলে আখ্যা দেয়।
তাদের মতে, ট্রাম্প নিজের প্রশাসনের ব্যর্থতা আড়াল করতে ঘৃণা ছড়ান, সম্প্রদায়কে বিভক্ত করেন এবং মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করতে আইসিই ব্যবহার করেন।
