মঙ্গলবার মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে, ১৯টি দেশের নাগরিকদের অভিবাসন আবেদন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হচ্ছে। আর বাইডেন প্রশাসনের সময় অনুমোদন পাওয়া অভিবাসন ও শরণার্থী মামলাগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই ১৯ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস) চার পৃষ্ঠার এক স্মারক জারি করে জানিয়েছে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত দেশগুলোর নাগরিকদের করা সব ধরণের মুলতুবি আশ্রয় আবেদন এবং ইউএসসিআইএস সুবিধার আবেদন স্থগিত ও পুনঃপর্যালোচনা করা হবে।
স্মারকে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এই নিশ্চিত করার জন্য যে, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর শরণার্থী বা বিদেশি নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর জাতীয় নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারবেন না।
এই নতুন আদেশে যেসব দেশের নাম রয়েছে, সেগুলো হলো: আফগানিস্তান, বার্মা (মিয়ানমার), চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলা। এই দেশগুলোর নাগরিকদের আগেও বিভিন্ন মাত্রায় প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছিল। চলতি বছরের জুনেই ট্রাম্প ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং বাকি সাতটি দেশের ক্ষেত্রে আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে এক ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই হামলার সাথে জড়িত রহমানউল্লাহ লাকানওয়াল (২৯) একজন আফগান নাগরিক, যিনি পূর্বে সিআইএ'র হয়ে তালেবান নেতা শনাক্ত করতে সহায়তা করেছিলেন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের একটি বড় অংশই অপরাধের সাথে জড়িত। ইউএসসিআইএস তাদের স্মারকে নাসির আহমাদ তাওহেদির উদাহরণ দিয়েছে, যিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের দিনে হামলার ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষ স্বীকার করেছেন, এবং লাকানওয়ালের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছে— যার ভিত্তিতে এই নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে উল্লেখ্য, লাকানওয়াল বাইডেন প্রশাসনের সময় দেশে প্রবেশ করলেও, তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সময় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে।
ইউএসসিআইএস বলেছে, আমেরিকান জনগণের নিরাপত্তা ও চিহ্নিত ঝুঁকির কারণে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সব নাগরিককে পুনঃপর্যালোচনা, সম্ভাব্য সাক্ষাৎকার ও পুনঃসাক্ষাৎকারের আওতায় আনা জরুরি।
সোমবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করে এই দেশগুলোতে পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এসব দেশ 'হত্যাকারী, রক্তচোষা ও সুযোগসন্ধানী বিপজ্জনক লোকজন' পাঠাচ্ছে।
ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক ঘটনাকে সামনে রেখে ট্রাম্প সব 'তৃতীয় বিশ্বের দেশ' থেকে অভিবাসন সাময়িকভাবে স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন। ইউএসসিআইএস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের সময় যেসব বিদেশি যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই দেশে ঢুকেছে বলে অভিযোগ, তাদের সম্ভাব্য জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে আমেরিকান জনগণকে সুরক্ষায় ইউএসসিআইএস দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সব সম্ভাব্য পদক্ষেপ বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে শিগগিরই অভিবাসন অধিকার নিয়ে কাজ করা গোষ্ঠীগুলোর তীব্র সমালোচনা এবং আইনি চ্যালেঞ্জ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী মুরাদ আওয়াওদে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাদের অনেকেই বহু বছরের কঠোর যাচাই-বাছাই শেষে দেশে এসেছেন। নিরাপত্তা ও নতুন জীবনের সন্ধানেই তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। আইনগত সুরক্ষা কেড়ে নিলে পরিবার ও কমিউনিটিতে ভীতির পরিবেশ তৈরি হবে এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে।
