যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি এক কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি মেয়র থাকাকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত কোনো আসামি নিউইয়র্কে পা রাখলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে মাথার ওপর আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুললেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হুমকিকে মোটেও আমলে নিচ্ছেন না।

নেতানিয়াহুর সফর নিশ্চিত: জানুয়ারিতে মামদানি আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব নিলেও, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর শহরটিতে সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমসের ডিলবুক ফোরামে দেওয়া এক ভার্চ্যুয়াল সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে বলেন, “হ্যাঁ, আমি নিউইয়র্কে আসব।” এর আগে গত জুলাইয়েও তিনি একই অঙ্গীকার করেছিলেন, যদিও তখন মামদানি মেয়র নির্বাচিত হননি।

নেতানিয়াহু-মামদানি আলোচনা: মামদানির সঙ্গে কথা বলার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না—এমন প্রশ্নে নেতানিয়াহু বলেন, “যদি তিনি মত পরিবর্তন করে আমাদের (ইসরায়েলের) অস্তিত্বের অধিকারের বিষয়টি মেনে নেন, তবে সেটি আলোচনার জন্য সহায়ক হবে।” প্রসঙ্গত, মামদানি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকে সমর্থন করেন, তবে তিনি ইসরায়েলের 'ইহুদি রাষ্ট্র' হিসেবে থাকার অধিকারের বিষয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তার যুক্তি, কোনো রাষ্ট্রে ধর্ম বা অন্য পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের স্তরভেদ থাকা উচিত নয়।

মেয়রের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি: মামদানি তার নির্বাচনি প্রচারণার সময় বারবার বলেছিলেন, আইসিসির পরোয়ানাভুক্ত যেকোনো নেতার বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে তিনি নির্দেশ দেবেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই ক্ষেত্রে নেতানিয়াহু এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও কোনো ছাড় পাবেন না।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণ: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। ইসরায়েল অবশ্য এসব অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা ক্ষীণ: মামদানির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নিউইয়র্কে পা রাখলে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও আন্তর্জাতিক আইন-সংক্রান্ত বড় সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্রীয় সরকারই নেয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইসিসির বিচারক ও প্রসিকিউটরদের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে।

নিউইয়র্কের গুরুত্ব: উল্লেখ্য, ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইহুদি জনগোষ্ঠী নিউইয়র্কেই বসবাস করে। এ ছাড়া এই শহরেই জাতিসংঘের সদর দপ্তর অবস্থিত। নেতানিয়াহু নিয়মিতই সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেন।

 

news